কলকাতা : মহানায়ক উত্তম কুমারের প্রয়াণ দিবসে উত্তম কুমার স্মরণে ধনধান্য অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয়েছিল মহানায়ক সম্মান ২০২৫ পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানে। আর এই অনুষ্ঠানের মঞ্চেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে উঠে এল বাংলা ভাষার প্রসঙ্গ। এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বারংবার স্বর্ণযুগের কালজীয় বাংলা গানের প্রসঙ্গে উঠে এসেছে। উত্তর কুমার প্রসঙ্গে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, 'আমাদের সকলের প্রাণের মানুষ। আমি এখনও মনে করি তিনি দেশের গর্ব, জাতির গর্ব, সংস্কৃতির গর্ব, চলচ্চিত্রের গর্ব। মহানায়ক উত্তম কুমার। আমার জীবনে খুব আফশোষ আছে। উত্তম কুমারের সঙ্গে কোনও দিন দেখা হয়নি। এই না দেখাটা, অদেখাটা আমায় বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়।'
বাংলা সিনেমা এবং তার গান প্রসঙ্গেও এদিন মুখ্যমন্ত্রী নিজের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন ভবানীপুরে অনেক সিনেমা হল ছিল। পূর্ণ, ইন্দিরা, ভারতী, বসুশ্রী। যখন ক্লাস ৪-৫ এ পড়ি, মায়ের সঙ্গে হাত ধরে ৯টা-১২টার সিনেমা দেখতে যেতাম। মা যেত, আমায় সঙ্গে নিত। তখন পুরিয়া চানাচুরের প্যাকেট পাওয়া যেত। চানাচুর খেয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। মা সিনেমা দেখত। কিন্তু যে গানগুলো শুনতাম, এত অপূর্ব, মাধুর্যপূর্ণ, সেগুলো আজও আমাদের ঠোটস্থ। আজকাল আমি দেখি বাংলা গানের চল সিরিয়াল থেকে শুরু করে সিনেমায় একটু কম। কম ব্যবহার করি আমরা। আমি আবারও বলছি সব ভাষাই ভাল। সব ভাষার গানই ভাল। তবে বাংলার স্বর্ণযুগের যে গানগুলো রয়েছে তার বাজার কিন্তু কোনওদিনও ফুরোবে না। বাংলা গানের একটা মাধুর্য, কথা, সংস্কৃতি, সুর, ভাষা- একবার ভাবুন তো, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, লতা, আশা, নির্মলা মিশ্র, সলিল চৌধুরী, আরতি, বনশ্রী এঁরা কত ভাল গান গাইতেন। আমরা ছোটবেলায় অনুরোধের আসর শুনতাম। মুখস্থ করার একটা প্রবণতা ছিল। ২টো আড়াইটেয় অনুষ্ঠান শুরু হলে, সেই সময় পাক্কা রেডিওর সামনে বসতে হত। এখন সেসব কোথায়।'
অনুষ্ঠানের পর ফেসবুকে একটি পোস্টও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, 'আমাদের বাংলা ভাষা এবং বাংলার সংস্কৃতি আমাদের গর্ব। আমরা বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে দেখেছি বাংলা ভাষাভাষীদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে, বাংলা ভাষায় কথা বললে তাঁদের আটক করছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। আমরা সব ভাষাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বাংলা ভাষাকে অপমান আমরা কখনও সহ্য করব না। আমি, বাংলার মানুষ-সহ সংস্কৃতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বদের বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার্থে ‘ভাষা আন্দোলন’-এ শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি আমাদের জাতির মেরুদণ্ড। এই বাংলা আমাদের জন্মভূমি, কর্মভূমি, নবজাগরণের ভূমি, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-বিদ্যাসাগর-বিবেকানন্দের ভূমি। রামকৃষ্ণদেবের ‘সর্বধর্ম সমন্বয়ের’ ভূমি। আসুন আমরা একত্রিত হয়ে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতিকে রক্ষা করি। জয় হিন্দ! জয় বাংলা!'