হায়দরাবাদ: একে কোভিড মহামারীতে দেশের অবস্থা খারাপ, তার মধ্যে কখনও ঝড়, কখনও বৃষ্টিতে দেশের এক একটি অংশ মাঝেমধ্যেই সঙ্কটে পড়ছে। আমফান ঝড় কিছুদিন আগে তছনছ করে দেয় পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। আর এবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দক্ষিণ ভারত। ভাসছে তেলঙ্গানা। একই অবস্থা অন্ধ্রপ্রদেশেরও। রাস্তাঘাট যেন নদী। জল ঢুকেছে ঘরেও। দুই রাজ্যই কার্যত জলবন্দি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।


বুধবারই তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে একপ্রস্থ কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগমোহন রেড্ডির সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। তেলেঙ্গানার মতো অন্ধ্রও বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত। কেন্দ্র সম্ভাব্য সবরকম সহযোগিতা করবে বলে দুই মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের পরিস্থিতির উপর তিনি নজর রাখছেন। দুই রাজ্যের মানুষকে কেন্দ্রের তরফে প্রয়োজনীয় সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনিও।

ত্রাণকাজ এবং উদ্ধারে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী, এনডিআরএফ ছাড়াও সেনার সাহায্য চেয়েছে তেলঙ্গানা সরকার। হায়দরাবাদ এবং রঙ্গারেড্ডি জেলার বন্যার্ত এলাকা থেকে ইতিমধ্যে এক হাজারের বেশি জলবন্দিকে উদ্ধার করেছে এনডিআরএফের টিম। সেনাও উদ্ধারকাজ শুরু করে দিয়েছে। সরকারি দফতরে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি ইনস্টিটিউটগুলিও দু-দিনের জন্য বন্ধ। বৃহস্পতিবার আর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই আশ্বস্ত করেছে আবহাওয়া দফতর।

বুধবার কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণের জেরে বিপর্যস্ত অবস্থা তেলেঙ্গানার। বর্ষণজনিত একাধিক দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর জানা গিয়েছে। শুধু হায়দরাবাদেই মারা গিয়েছেন ১৫ জন। এক-একটা রাস্তায় নদীর মতো জলের প্রবল স্রোত। আস্ত গাড়িও জলে সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জীবন থমকে তেলেঙ্গানায়।হাজার হাজার একর চাষজমি জলে ডুবে। মৃতের সারিতে দু'মাসের একটি শিশুও রয়েছে। তেলেঙ্গানার নীচু এলাকাগুলি সম্পূর্ণ ভাবে জলে নিমজ্জিত। রাতভর বৃষ্টির জেরে পাঁচিল ভেঙে ১০টি ঘর ভেঙেছে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। মৃতেরা ওই ঘরগুলিতে থাকতেন। দিনে কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি ধরলেও রাত থেকে ফের মুষলধারে শুরু হয় বর্ষণ।

জলের তোড়ে একজন ভেসে যাচ্ছেি এমন ছবিও সামনে এসেছে। রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যাওয়া ছবিটি দেশবাসী অসহায়ের মতো দেখেছে। একসময়ে অবশ্য পুলিশ ও স্থানীয়রা মিলে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন।হায়দরাবাদের বানজারা হিলস এলাকায় বিদ্যুত্‍‌স্পৃষ্ট হয়ে বছর ৪৯-এর এক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। মৃতের প্রাকৃতিক চিকিত্‍‌সার একটি ক্লিনিক ছিল। মেঝের জমা জল বার করতে গিয়ে তিনি বিদ্যুত্‍‌স্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের খোঁজ নেই। পুলিশ তাঁদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।

ঝড়জলে বিপর্যয়ের আশঙ্কায় তেলেঙ্গানায় একাধিক অঞ্চলে বিদ্যুত্‍‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তেলেঙ্গানার নগর উন্নয়ন মন্ত্রী কেটি রামারাও তেলেঙ্গানা স্টেট সাদার্ন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বৈঠক করেন। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুত্‍‌ সংযোগ দিতে বলেন মন্ত্রী।অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা জারি রয়েছে ঠিকই, কিন্তু যে রকম অবস্থা এখন দুটি রাজ্যে তাতে সবকিছু স্বাভাবিক হতে কতখানি সময় লেগে যাবে তা জোর গলায় কেউ বলতে পারছেন না।