হায়দাবাদ: দিন শুরু হয় ভোর পাঁচটায়। রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাস। আধুনিক ভারতের শিক্ষা টেক্কা দেয় অচলায়তনকেও। আর নিজেদের অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে সেই অচলায়তনে ছেলেমেয়েকে ঠেলে দিতে পিছপা হন না মা-বাবা। জীবন দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গেল ১৬ বছরের এক কিশোর। শেষ চিঠিতে চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়ে গেল মা-বাবাকেও (Hyderabad Student Suicide)।


জীবন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে গেল ১৬ বছরের এক কিশোর


তেলঙ্গানার শ্রী চৈতন্য জুনিয়র কলেজের ঘটনা। সেখানে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া, ১৬ বছরের এক কিশোর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। এই ঘটনায় শিউড়ে উঠেছে গোটা রাজ্য। কিন্তু তার চেয়েও বেশি শিউড়ে উঠেছে এই জেনে যে, বিগত কয়েক মাস ধরে কী নিদারুণ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল ওই কিশোর। মায়ের উদ্দেশে লেখা তার সুইসাইড নোট পড়েও শিউড়ে উঠতে হয় (Student Suicide)।


মায়ের উদ্দেশে লেখা সুইসাইড নোটে ওই পড়ুয়া লেখে, ‘আমি আর পারছি না মা। জানি ভুল কাজ, তাও করেত বাধ্য হচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিও। যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, দুনিয়ার কারও যেন এমন অভিজ্ঞতা না হয়। দেখো যেন ওদের শাস্তি হয়। তোমাকে এই মুহূর্তে এনে দাঁড় করানোর জন্য দুঃখিত’।


আবাসিক ওই কলেজে থেকে পড়াশোনা করত ওই কিশোর। এক বছরও হয়নি ভর্তি হয়েছিল। প্রস্তুতি নিচ্ছিল আইআইটি-র। মঙ্গলবার বিকেলেই দেখা করে এসেছিলেন বাবা। সমস্যা হচ্ছে বলে জানালে, ছেলেকে বুঝিয়ে এসেছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টা পরই ওই কিশোরের মৃত্যুর খবর পৌঁছয় বাড়িতে।


আরও পড়ুন: Lok Sabha Elections 2024: ‘নেতৃত্ব নয়, আগ্রহ ঐক্যে’, মমতা থেকে কেজরী, দাবিদার অনেক বলেই কি পিছু হটছে কংগ্রেস!


ওই কিশোরের সহপাঠীরা জানিয়েছে, ভোর ৫টায় দিন শুরু হয় তাদের। রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। আইআইটি-র জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। শুধমাত্র প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ এবং নৈশভোজের জন্য তিন বার কয়েক মিনিটের বিরতি পাওয়া যায়।  এত ঘন ঘন পরীক্ষা নেওয়া হয় যে, ক্লাস থেকে ফিরে রাত জেগে আলাদা করে পড়াশোনাও করতে হয়।


এত কিছুর পরও, কোথাও একটু এদিক ওদিক হলে, পড়ুয়াদের চরম হেনস্থা করা হয়, সকলের সামনে অপদস্থ করা হয় বলে অভিযোগ আত্মঘাতী পড়ুয়ার সহপাঠীদের। তাঁদের দাবি, প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে কলেজের অন্দরে পৃথক শৃঙ্খল তৈরি হয়েছে, তাতে ভাল থেকে খারাপ পড়ুয়াদের নাম তোলা হয়।


আত্মঘাতী ওই পড়ুয়ার সহপাঠীরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ক্লাস থেকে ফেরার সময় বন্ধুকে দেখতে পায়নি তারা। অনেক ক্ষণ না ফেরায় ওয়ার্ডেনকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে তেমন গরজ দেখাননি ওয়ার্ডেন। তাতে নিজেরাই খানাতল্লাশি শুরু করে ছাত্ররা। সেই সময়ই ক্লাসরুমে ওই পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায় সকলে। তড়িঘড়ি নামিয়ে বন্ধুর দেহ নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ছুটে যায় বাকি পড়ুয়ারা। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।


ভোর ৫টায় দিন শুরু, রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাস!


এর পর সকলে হস্টেলে ফিরে এলে, ভোর ৪টে নাগাদ পড়ুয়াদের সকলকে দু’দিনের ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।  কোনও রকমে আত্মঘাতী পড়ুয়ার কাছ থেকে পাওয়া সুইসাইড নোট পুলিশের হাতে তুলে দেয় তার পড়ুয়ারা। তাতেই বিষয়টি সামনে আসে। জানা গিয়েছে, খুব চাপের মধ্যে রাখা হয়েছিল ওই পড়ুয়াকে। বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য শারীরিক অত্যাচারও করা হতো রীতিমতো। অপমান করা হতো সকলের সামনে। তাতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল ওই কিশোর। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল সকলের থেকে। তার আত্মঘাতী হওয়ার নেপথ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষই দায়ী বলে দাবি সহপাঠীদের।


শুধু তাই নয় তাঁদের ছেলে যে আত্মঘাতী হয়েছে, তা কলেজের কাছ থেকে নয়, ছেলের সহপাঠীদের কাছ থেকে জানতে পারেন ওই কিশোরের পরিবারের লোকজন। তেলঙ্গানার শিক্ষামন্ত্রী সবিতা ইন্দ্র রেড্ডি বিষয়টি তদন্ত করে দেখে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। ওই কলেজে পড়ুয়াদের মারধরের বেশ কিছু ভিডিও-ও ইতিমধ্যে সামনে এসেছে। এই ধরনের আচরণ বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন সবিতা। কিন্তু এই প্রথম নয়, গত ১০ দিনে এই নিয়ে তেলঙ্গানায় চতুর্থ পড়ুয়ার আত্মঘাতী হওয়ার খবর সামনে এল।