নয়াদিল্লি: গাড়ির (car) নিচে যে একজন মানুষ পিষে (trample) যাচ্ছে, সে কথা তাঁর প্রাণপণ আর্তনাদ (scream) থেকে আলবাৎ টের পেয়েছিল অভিযুক্তরা। দাবি, বর্ষবরণের (new year 2023) রাতে দিল্লির (delhi) মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত তরুণীর বান্ধবীর। মূল প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁর এই বয়ান শুনে  নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে শীতের রাজধানীতে। এও কি সম্ভব? কতটা নির্মম হলে এমন আর্তনাদ শুনেও ১৩ কিলোমিটার হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া যায় কাউকে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এর মধ্যে। নিহতের মায়ের দাবি, 'ওই পাঁচ জনের ফাঁসি চাই। আমার মেয়ের শেষকৃত্য হয়ে গিয়েছে বলে জনতা মোটেও শান্ত হবে না।' এদিন সন্ধেয় তরুণীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। 


শিউরে ওঠার মতো বিবরণ...
বর্ষবরণের সেই রাতের কথা ভেবে শিউরে উঠছেন নিহত তরুণীর বন্ধু। নিউ ইয়ার পার্টিতে বন্ধুর সঙ্গে স্কুটারের পিছনে তিনিও চেপেছিলেন। তার পর...মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের তিনি বললেন, 'ব্যালেনো গাড়িটি আমাদের একেবারে মুখোমুখি ধাক্কা মেরেছিল। আমি একপাশে কাত হয়ে পড়ি, ও (বন্ধু) সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।' তরুণীর দাবি, তাঁর বন্ধু যে গাড়ির নিচে চাপা পিষে যাচ্ছেন সেটা টের পেয়েছিল গাড়ির ভিতরে থাকা লোকজন। তরুণীর কথায়, 'ওরা ইচ্ছা করে গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে গেল। ওরা জানত। গাড়ির নিচে ও তখন আর্তনাদ করছিল। এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে কিছু না বুঝতে পেরে বাড়ি ফিরে যাই।' এতেই শেষ নয়। তরুণীর দাবি, 'ওরা একবার এগোল, তার পর পিছোল। দুবার একই জিনিস করেছিল ওরা। তার পর ওকে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে এগিয়ে গেল।' সিআরপিসির ১৬৪ নম্বর ধারায় তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে খবর। এদিনই তরুণীর অটপ্সি রিপোর্ট হাতে পেয়েছে পুলিশ। তাতে মাথা, মেরুদণ্ড ও নিম্নাঙ্গে ভোঁতা কিছুর অভিঘাতই স্পষ্ট। কোনও যৌন হেনস্থার প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বলে দাবি পুলিশের।  


ধৃতদের দাবি...
যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের দাবি, স্কুটির সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর তাঁরা বুঝতে পারেননি দীর্ঘক্ষণ কী হয়েছে। পুলিশের সামনে তাঁদের দাবি, গাড়ির তলায় যে কেউ পিষে যাচ্ছেন সেটাও তাঁরা খেয়াল করেননি। তবে ধৃতরা এটা জানিয়েছ, যে ঘটনার সময় পুরোপুরি নেশার ঘোরে ছিল তারা। হরিয়ানার মুন্থাল থেকে দু বোতল মদ সাবাড় করে ফিরছিল। গাড়িতে গান চলছিল উচ্চগ্রামে। সব মিলিয়ে পিষে যাওয়া তরুণীর আওয়াজ তাঁদের কান এড়িয়ে যায়, দাবি ধৃতদের। জন্টি গ্রামের কাছাকাছি পৌঁছনোর পরই তারা দেহটি খেয়াল করে। ইউ-টার্ন নেওয়ার সময় তরুণীর হাতের অংশটি দেখতে পায় তারা। ভয় পেয়ে সেখানেই দেহ ফেলে রেখে পালায় তারা।    


আর কী...
এদিন নিহতের মার সঙ্গে দেখা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নিহতের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণার পাশাপাশি তাঁর মামলা লড়ার জন্য সেরা আইনজীবী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে নিহত তরুণী ও তাঁর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে যে ধরনের কথা শুরু হয়েছে, তার প্রতিবাদ করেন দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। বর্ষবরণের রাতে নিহতরা মদ্যপান করছিলেন কিনা, সেই নিয়ে সকাল থেকে নানা ধরনের জল্পনা চলছিল। তার প্রতিবাদ জানিয়ে মালিওয়ালের ট্যুইট, 'স্টপ ভিক্টিম শেমিং।'


আরও পড়ুন:'বিডিও-রা সবথেকে বড় ডাকাত, সব অফিস ঘেরাও করা হবে', হুঁশিয়ারি দিলীপের