নয়াদিল্লি: অভিশপ্ত ‘টাইটানিক’ জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখার জিগির (Titan Submersible)। টাইটানিকের মতোই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে ডুবোজাহাজ ‘টাইটান’-এর (Titanic Wreckage)। আটলান্টিকের নীচে সলিল সমাধি ঘটেছে পাঁচ জনের। তার পর থেকে যত সময় যাচ্ছে, ততই শিউড়ে ওঠার মতো তথ্য সামনে আসছে। এবার তাতে নয়া সংযোজন। মর্মান্তিক পরিণতির আগের মুহূর্তও ‘টাইটান’-এর মৃত্যুপথযাত্রীরা ‘টাইটানিক’ ছবি দেখছিলেন বলে জানা গেল।
আমেরিকার জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এমনই তথ্য সামনে এনেছে। ‘টাইটান’ ডুবোজাহাজে সওয়ার ছিলেন পাকিস্তানের ধনকুবের শেহজাদা দাউদ এবং তাঁর ছেলে সুলেমান। সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন তাঁর শেহজাদার স্ত্রী ক্রিস্টিন দাউদ। তিনি জানিয়েছেন, ২০১২ সালে সিঙ্গাপুরে একটি প্রদর্শনী দেখার পর থেকেই ‘টাইটানিক’ নিয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়েন শেহজাদা। ২০১৯ সালে আইসল্যান্ড বেড়াতে গিয়ে সেই হিমশৈলকে প্রত্যক্ষ করেন, যাতে ধাক্কা খেয়ে ১০০ বছর আগে আটলান্টিকের অতলে তলিয়ে যায় ‘টাইটানিক’ জাহাজ। তাতেই শেহজাদা আকুল হয়ে ওঠেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ক্রিস্টিন।
ক্রিস্টিনের দাবি, ‘টাইটানিক’-এর ধ্বংসাবশেষ দেখার যে বিজ্ঞাপন দেয় পর্যটন সংস্থা “ওশিয়ানগেট” সংস্থা, তা দেখেই সুলেমান আটলান্টিকের গভীরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ক্রিস্টিনেরও তাঁর সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অতিমারির দরুণ প্রথমে সফর পিছিয়ে যায়। তার পর নানা বাধা-বিপত্তি আসতে থাকে। তাতে ছেলে সুলেমান বাবার সঙ্গে যেতে রাজি হয়। তাতেও বিমান ছাড়তে দেরি হয় প্রথমে। শেষ মেশ ‘পোলার প্রিন্স’ জাহাজে পৌঁছেই যান শেহজাদা এবং সুলেমান।
আরও পড়ুন: Maharashtra NCP Crisis: বালাসাহেব-রাজ থেকে শরদ-অজিত, রাজনীতির ‘মহাভারতে’ ভাইপোরা বরাবরই ‘গেমচেঞ্জার’
চোখের সামনেই শেহজাদা এবং সুলেমানকে জাহাজে উঠতে দেখেন ক্রিস্টিন। একে একে পর্যটন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও স্টকটন রাশ, ‘টাইটানিক’ অনুসন্ধানকারী পল-হেনরি নারজিওলেট এবং ব্রিটিশ ধনকুবের হ্যামিশ হার্ডিং সওয়ার হন। ক্রিস্টিনের চোখের সামনেই জাহাজ থেকে ২ কোটি টাকা টিকিটের ডুবোজাহাজে ওঠেন সকলে। তার পর জলের নীচে ঢাকা পড়ে যায় সেটি।
ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, ডুবোজাহাজের মধ্যে বাঙ্ক বেডের ব্যবস্থা ছিল। বাফে ছিল এলাহি খানাপিনার জন্য। ‘টাইটানিক’ ছবিটিও দেখানোর আয়োজন ছিল। এ ছাড়াও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, একটি পুলও ছিল। ক্রিস্টিনের দাবি সংস্থার তরফে বার বার অভয় দেওয়া হয় তাঁদের। তাতে রোমাঞ্চ আরও বেড়ে যায় শেহজাদা এবং সুলেমানের। ব্যাটারি বাঁচাতে জলে নামার পর ডুবোজাহাজের আলো নিভিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছিল। মহাসাগরের নীচে বায়োলুমিনিসেন্ট সামুদ্রিক প্রাণী দেখে চোখেই চোখ ধাঁধিয়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়। চার ঘণ্টার সফরে মিউজিক প্লেয়ার নিয়ে যাওয়ার অনুমতিও ছিল।
কিন্তু এতকিছুর পরও আর আটলান্টিক থেকে উঠে আসেনি ‘টাইটান’ ডুবোজাহাজ। জলে নামার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পর শুরু হয় অপেক্ষা। মহাসাগরের বুক খুঁড়ে ফেলা হয় কার্যত। তাতে ২২ জুন উদ্ধার হয় ডুবোজাহাজের ধ্বংসাবশেষ।