কলকাতা: রাত পেরোলেই পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য বিহারে রেজাল্ট আউট। জেডিইউ-বিজেপির জোট না আরজেডি-কংগ্রেসের মহাজোট, কে  ক্ষমতায় আসবে, জানতে দেশব্যাপী কৌতূহল চরমে। বিহারের ফলের দিকে তাকিয়ে বাংলাও।  কারণ, বছর ঘুরলে এরাজ্যেও বিধানসভা ভোট। প্রতিবেশী রাজ্যের  ভোটের ফল থেকে কি এরাজ্যের ভোটের ফলের আগাম আভাস মিলবে? পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, সবটা না হলেও খানিকটা আভাস মিলতেই পারে। কারণ, বিহার ও বাংলা দুই রাজ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রচুর। যাঁরা লকডাউনে কাজ এবং বাসস্থান হারিয়ে অকুলপাথারে পড়েছিলেন। বাড়ি ফেরার ট্রেন-বাস না পেয়ে খালি পেটে মাইলের পর মাইল হাঁটতে বাধ্য হয়েছিলেন। কেউ বাড়ি অবধি পৌঁছতে পেরেছিলেন, কেউ রাস্তাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। যদিও মোদি সরকার সংসদে জানিয়ে দেয়, লকডাউনে বাড়ি ফেরার পথে কতজন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, সেই সংক্রান্ত কোনও পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।


বিভিন্ন সমীক্ষার দাবি,  লকডাউনের পর বিহারে ফিরেছিলেন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। পর্যবেক্ষকদের মতে, বিহার ভোটে বিজেপি-জেডিইউ জোট হারলে বোঝা যাবে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষোভের আঁচ পড়েছে ইভিএমে। সেক্ষেত্রে বাংলা নিয়ে বিজেপির উদ্বেগের কারণ থেকে যাবে। কারণ, এরাজ্যেও পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তৃণমূল অবশ্য ফল ঘোষণার আগেই আত্মবিশ্বাসী যে এমনটা হবেই। দলীয় সাংসদ সৌগত রায়ের দাবি, বিহার ভোটের প্রভাব পড়বে। বিহার লাগোয়া রাজ্য। এখানে প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। বিহারে হারলে মোদির ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে। পরিযায়ী শ্রমিকরা লকডাউন ভালভাবে নেয়নি, প্রমাণিত হবে।


বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার এই যুক্তি উড়িয়ে দাবি করেছেন, এর আগে তিনবার নীতীশের সরকার এসেছে। বাংলায় উল্টো পরিস্থিতি। বাংলার পরিস্থিতি আলাদা। বাংলার মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।  ফলে বিহারে যাই হোক, তার প্রভাব বাংলায় পড়বে না।


সিপিএম-কংগ্রেস আবার তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষকেই এক সারিতে ফেলে নিশানা করেছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, বিহার হবে বাংলা। তৃণমূল সামলা। নীতীশ কুমার যেমন সন্ন্যাসের কথা ঘোষণা করেছেন, মমতাকেও তাই করতে হবে। জোট ক্ষমতায় আসবে। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর ভবিষ্যদ্বাণী, তৃণমূল এবার হারছে। ওরা ভাল করেই জানে। বিহার ভোটে বিজেপির হার নিশ্চিত। বিজেপির ওপর কেউ ভরসা রাখতে পারছে না। এরাজ্যে আমরা ও বেশ কিছু শক্তি একত্রিত হয়ে আসবে। বিহার ভোটের ফলাফল বিষয়টিকে আরও সুনিশ্চিত করে দেবে। এবার তৃণমূল-বিজেপি কেউ নয়।


২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিরাট জয়ের পরও ২০১৫-এ বিহারে আরজেডি-জেডিইউ জোটের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিল বিজেপি। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গেও দাগ কাটতে পারেনি তারা। এবার বিহারে কী হবে? পড়শি রাজ্যের এই ফলের প্রভাব কি বাংলায় একুশের ভোটে পড়বে? সেটাই দেখার।