নয়াদিল্লি: রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটে কংগ্রেসের হাত ধরে। পরবর্তীতে আলাদা দল গঠন। তবে খাতায় কলমে তৃণমূল (TMC) দলটির সঙ্গে কংগ্রেসের নামও জুড়ে রয়েছে। যদিও তার জন্য পরস্পরের সমালোচনা থেকে বিরত থাকেন না কোনও পক্ষই। তবে এ বার একধাপ এগিয়ে 'তৃণমূলকেই আসল কংগ্রেস' (Abhishek on Congress) বলে উল্লেখ করলেন জোড়াফুল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
এবিপি নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কংগ্রেসকে নিয়ে মুখ খুললেন অভিষেক। এবিপি নিউজের প্রতিনিধি মনোজ্ঞা লোইওয়ালের সঙ্গে কথোপকথনে দুই দলের মধ্যে ফারাকও বুঝিয়ে দিলেন। অভিষেকের দাবি, কংগ্রেসের উপর ভরসা করেছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু শুধু মুখে বলে যাওয়া কাজ কংগ্রেসের। কাজে করে দেখায় তৃণমূল।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলেও, বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ এখনও পর্যন্ত আক্ষরিক অর্থেই বিশ বাওঁ জলে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পর অভিষেককে সঙ্গে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন। সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি বিজেপি বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু তার পরও একছাতার নিচে দেখা যায়নি বিরোধী দলগুলিকে।
বরং মমতাকে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার কথা উঠলেও, কংগ্রেসের তরফে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করা হয়নি। বরং গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোটেই তৃণমূল ভাগ বসিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতে বর্তমানে দুই দলের সমীকরণে আরও তিক্ততা যোগ হয়েছে বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। কারণ সম্প্রতি সংসদে বাজেট অধিবেশনেও কংগ্রেসের নেতৃত্বে সংসদে বিক্ষোভ দেখানো থেকে দূরত্ব বজায় রাখে তারা। আলাদা নিজেদের মতো করে বিক্ষোভ দেখায়।
সেই আবহে কংগ্রেসকে নিয়ে প্রশ্ন করলে অভিষেক বলেন, "কংগ্রেসের উপর ভরসা করেছিলেন মানুষ। আমি বলব কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে পার্থক্য একটাই, একজন শুধু মুখে বলে, কাজে করে দেখায় অন্য় জন। আমি তাই সবসময় বলি, পেটে আগুন থাকলেই হল। তৃণমূলই আসল কংগ্রেস। আমরা মাথা নত করি না, ভয়ও পাই না। একটি ট্যুইট করা আলাদা কথা, আর ওই ট্যুইটের সঙ্গে মানুষের পাশে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক।"
২০২৪-এ তৃণমূল কোন ভূমিকায় থাকবে, তা মানুষকেই ঠিক করতে হবে বলে মন্তব্য করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, "মানুষ কাকে, কোন ভূমিকায় দেখবেন, তাঁদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবে। সামান্য বাড়লেওষ এখন গোয়া, ত্রিপুরায় অসমেও তৃণমূলের ইউনিট রয়েছে। দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক হিসেবে সকলের কাছে যাব। মানুষ চাইলে আপন করে নেবেন, না চাইলে করবেন না।"
কংগ্রেসের ভোটে ভাগ বসানো থেকে শুরু করে উপ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থীকে সমর্থন জানানো, গত এক বছরে বিরোধী শিবিরেই একাধিক বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে তৃণমূল। আসলে তারা সরাসরি বিজেপি-র বিরোধিতা করতে নারাজ বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিষেকের দাবি, যাঁরা মানুষকে বিভ্রান্ত করেন, বিশ্বাশঘাতকতা করছেন, তৃণমূলের কাছে তারাই আসল বিরোধী। কংগ্রেসে আদর্শের বুলি কপচালেও, আসলে তাদের আদর্শ কী, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোটকে সামনে রেখে, কেরলে পরস্পরের বিরোধিতাও আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন অভিষেক। তাই মানুষের উপরই দায়িত্ব ছেড়েছেন অভিষেক।