কলকাতা: আজ শ্রীশ্রী কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো, কালও চলবে সম্পদের দেবীর আরাধনা। এমনিতে অনেক বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার মা লক্ষ্মীর পুজো হয়। এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতে লক্ষ্মীর পুজো হয়। তবে পূজার উপাচারে পরিবর্তন হয় মাস ভেদে।
কোজাগরী শব্দের উৎপত্তি কো জাগতী অর্থাৎ কে জেগে আছ থেকে। কথিত আছে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন দেবী রাত্রে খোঁজ নেন - কে জেগে আছে? যে জেগে অক্ষক্রীড়া করে, লক্ষ্মী তাকে ধন সম্পদ দান করেন ।
"নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী । তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ ।। "
অক্ষক্রীড়া শব্দের সাধারণ অর্থ পাশা খেলা। সারারাত জেগে লক্ষ্মীর আরাধনা করাই এই পুজোর বিশেষ আচার। খারিফ শস্য ও রবি শস্য ঠিক যে সময় হয় বছরের সেই সময় বাঙালির বাড়ি বাড়ি হয় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা। পুজো আজকাল তিথি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলেও কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর প্রকৃষ্ট সময় প্রদোষকাল, অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে দু ঘণ্টা পর্যন্ত। আগেরদিন রাত্রি থেকে পরদিন প্রদোষ পর্যন্ত তিথি থাকলে পরদিন প্রদোষেই পুজো করা বিধেয়। আবার আগেরদিন রাতে তিথি থাকলেও যদি পরদিন প্রদোষে তিথি না থাকে তাহলে আগেরদিন প্রদোষেই পূজা করা ঠিক। লক্ষ্মীপুজোয় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পুজো হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান। লক্ষ্মীপুজোয় ঘণ্টা বাজাতে নেই, দেবীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু পুজোর পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পুজো করতে হয়। লক্ষ্মীপুজো হয় প্রতিমা, সরা বা লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে। পূর্ববঙ্গীয়রা সাধারণত সরা বা প্রতিমায় পুজো করেন, পশ্চিমবঙ্গীয়রা পুজো করেন ধানপাত্রে বা ঘটে। পুজোর আগে পুজোর স্থান ভালভাবে পরিষ্কার করে ধূপ দীপ জ্বালাতে হয়। লক্ষ্মীর পা-সহ আলপনা আঁকতে হয়। এই পুজোয় আলপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূল আলপনার সঙ্গে বাড়ি জুড়ে আঁকা হয় ধানের ছড়া, মুদ্রা, আর মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের ছবি। এই প্রতীকগুলি পুজোর মাহাত্ম্য যেমন ব্যাখ্যা করে, তেমনই এর আচারের একটা অংশ হয়ে উঠেছে এই বিশেষ ধরনের আলপনা। ঘটের পাশে লক্ষ্মীর পা অবশ্যই আঁকতে হবে। এক মনে আন্তরিকভাবে পুজো করলে বিনা মন্ত্রেই পুজো সিদ্ধ হয়। তবে মন্ত্রপাঠ ও পুজোপাঠে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বিনা মন্ত্রে পুজো করবেন না। বিনা মন্ত্রে পুজো শুধু অনভিজ্ঞদের জন্য।