কলকাতা: দূরপাল্লার ট্রেনে অনেক দূরের পথ যাওয়ার ক্ষেত্রে স্লিপার ক্লাসে যাওয়ার ব্যাপারে যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ করছিলেন। বিশেষ করে সাইড বার্থ নিয়ে তো যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। বার বার একই ধরনের অভিযোগ আসতে থাকায় সমাধানের পথ বার করেছে ভারতীয় রেল। এ বার রেল পরিষেবা সাইড বার্থে একটি নতুন ফিচার যুক্ত করেছে। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো ট্যুইটারে শেয়ার করেন  রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, যেখানে রেল পরিষেবার একজন কর্মকর্তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে নতুন বসার জায়গাগুলি কাজ করবে।


যা এতদিন চলছিল তা দেখে নেওয়া যাক একবার। স্লিপার ক্লাস ট্রেনে চারটি বার্থ থাকে। আপার ক্লাস বার্থ মানে একদম উপরে, মিডল ক্লাস বার্থ মানে মাঝখানে  আর  লোয়ার ক্লাস বার্থ মানে নীচের দিকে এবং সাইড বার্থ মানে জানলার পাশে বসার সিট। এই সাইড বার্থ নিয়েই বহুবার যাত্রীরা সরব হয়েছেন। যাত্রীদের বক্তব্য, সিট গুলির অসম ব্যবধানের জন্য বিশ্রাম নিতে কিংবা রাতে ঘুমাতে ভীষণ সমস্যা হয়। টানা একদিন এমন সিটে কাটালে অবধারিতভাবে পরের দিন ব্যথা হয় কাঁধে এবং কোমরে।


সাইড বার্থ নিয়ে নানা সময়ে কমপ্লেন জমা পড়েছে প্যাসেঞ্জারদের তরফে। আসলে, কামরার অন্যান্য বার্থের তুলনায় স্লিপার কোচের লোয়ার সাইড বার্থ বেশ খানিকটা  আলাদাই। এই রকম বার্থে মুখোমুখি বসার ব্যবস্থা দু’টি বিচ্ছিন্ন আসনে। শোয়ার সময় সেই দুই আসনের পিঠের অংশ খুলে দিলে একটি বার্থ সৃষ্টি হয়। বসার সময় অসুবিধা দেখা না দিলেও শুতে গেলে সমস্যায় পড়েন ওই বার্থের যাত্রী। কেন এই সমস্যা? দু’টি ভিন্ন আসনের অংশদুটি জুড়ে তৈরি হওয়া বার্থের মাঝে থেকে যায় একটা গভীর বিভাজনরেখা। তা খানিক গর্তের চেহারা নেয়। কোনও সময়ে তুমুল গতিতে থাকাকালীন  ট্রেনের ঝাঁকুনিতে মাঝের জায়গাটি হঠাৎ ঝুলে যায় বা হঠাৎ উপরে ওঠে। এ রকম একটা তারতম্যর অভাবের মধ্যে শোয়ার সময় পিঠ, কোমর-সহ গোটা মেরুদণ্ডে, স্পাইনাল কর্ডে খুব কষ্ট হয়। বয়স্ক, দুর্বল  মানুষদের শরীরে অনেক সময় এমন তীব্র যন্ত্রণার সৃষ্টি হয় যে যাত্রা শেষ করে ট্রেন থেকে নেমে পড়ার পরেও গা থেকে ব্যথা যেতে চায় না।


এই সমস্যা মেটাতেই রেল উদ্যোগী হয়েছে। সফরকারীদের সমস্যা সমাধানে এবার স্লিপার ও থ্রি টিয়ার এসি কোচের সাইড লোয়ার বার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন করেছে রেল দফতর। স্লিপার-ক্লাসে নীচের সাইড বার্থটিকে নতুন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। জানলার পাশের দু’টি সিটকে একসঙ্গে জুড়ে তার উপরে একটি বিছানা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা ট্রেনযাত্রার সময় বেশ আরামদায়ক হবে বলে দাবি করা হচ্ছে।বার্থের উচ্চতায় সমতা আনতেই যোগ করা হয়েছে গদিআঁটা একটি অতিরিক্ত বোর্ডের। ভাঁজ করা দু’টি সিটের পিঠের দিকটা নামিয়ে ফেলার পরে তার উপরে পেতে দিতে হবে এই নতুন বোর্ড। এতে শয্যায় আর উঁচু-নীচু থাকবে না।হাইটের ফারাক দূর হয়ে সমতল বেড তৈরি হবে। আবার যেহেতু নতুন  বোর্ডটি সিটের চেয়ে খানিক চওড়া তাই সওয়ারিরা ঘুমানোর সময় স্বস্তিবোধ করবেন বলে মনে করছে রেল কর্তৃপক্ষ। তাই যাত্রা এক-দু’ রাতের হলে, সাইড বার্থ পড়লে যাত্রীদের মনে যে আতঙ্ক তৈরি হতো, সেটা ঘুচবে বলে আশা করা যাচ্ছে।