অযোধ্যা: রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে উৎসবের আমেজ। তার মধ্যেই অশ্রজলে সিক্ত হলেন গেরুয়া শিবিরের দুই নেত্রী, একজন বর্ষীয়ান নেত্রী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী, অন্য জন সাধ্বী ঋতম্ভরা। রামজন্মভূমি আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন দু'জনই। বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের দাবি নিয়ে মিটিং-মিছিল-আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, যার জেরে মামলা-মকদ্দমার মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছে তাঁদের। এতদিন পর অযোধ্যার ওই জায়গায় রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা হতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তাঁরা। পরস্পরকে আলিঙ্গন করে হয়ে পড়লেন বাকরুদ্ধ। (Ayodhya Ram Mandir Inauguration)
সোমবার অযোধ্যায় নবনির্মিত রামমন্দিরের উদ্বোধন হল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল 'রামলালা' অর্থাৎ রামচন্দ্রের শিশুকালের মূর্তিতে। সেই নিয়ে যখন উত্তেজনায় ফুটছে অযোধ্যা, তখন উমা এবং ঋতম্ভরার হাত ধরে কার্যতই পিছিয়ে গেল সময়। আবেগঘন সেই মুহূর্ত ধরা পড়ল সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। পরস্পরকে আলিঙ্ঘন করে বেশ খানিক ক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তাঁরা। দু'জনেই নিজেদের সামলানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু আপনাআপনিই অশ্রুধারা নেমে আসে গাল বেয়ে। (Ram Janmabhoomi Movement)
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভাষণ দিতে মঞ্চে ওঠার আগে, অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উমা লেখেন, 'অযোধ্যায় রামমন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি, 'রামলালা'র জন্য অপেক্ষা করছি আমরা'। রাম জন্মভূমি আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা লালকৃষ্ণ আডবানি এবং মুরলি মনোহর জোশী যদিও এদিনের অনুষ্ঠানে যাননি। বয়সের উল্লেখ করে গত মাসে আডবানি এবং জোশীকে অনুষ্ঠানে না আসার বার্তা দেয় রাম শ্রী জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রে সংগঠন। পরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে আমন্ত্রণ জানান হয়। আডবানি অনুষ্ঠানে আসবেন বলেও জানায় তারা। কিন্তু রবিবার জানা যায়, প্রচণ্ড ঠান্ডার জন্য় আডবানি আসছেন না।
আরও পড়ুন: Yogi Adityanath: 'মনে হচ্ছে ত্রেতা যুগে এসে পড়েছি', 'মন্দির বহি বনা হ্যায়', বললেন যোগী
রামজন্মভূমি আন্দোলনের একেবারে সূচনাপর্ব থেকেই অযোধ্যায় যাতায়াত উমার। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনও অযোধ্যাতেই ছিলেন তিনি। বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার চার্জশিটে উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়ার জন্য উমা ভারতীর নামের উল্লেখ ছিল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উমা ভারতীর মুখে যে স্লোগান শোনা যায়, তারও উল্লেখ মেলে, যা হল, “এক ধাক্কা অউর দো, বাবরি মসজিদ তোড় দো”, “মসজিদ গিরাও, মন্দির বানাও, বাবর কি অলাদ কো পাকিস্তান ভাগাও”, “জিন্নাহ্ বোলে জয় শ্রী রাম”। চার্জশিটে বলা হয়, উমা ইঙ্গিত দিতেই বাবরি মসজিদ ভাঙা শুরু হয়। গোটাটাই পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। তিনি নিজে ওই পরিকল্পনার অংশ ছিলেন বলে স্বীকারও করে নেন উমা। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন তিনি
বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় ঋতাম্ভরারও নাম ওঠে CBI-এর চার্জশিটে। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮২ সাল পর্যন্ত তাঁর একাধিক ভাষণের কথা উঠে আসে চার্জশিটে, যেখানে 'দেশদ্রোহী'দের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করতে শোনা যায় তাঁকে। হিন্দুদের মাতৃভূমির দখল ছিনিয়ে নিতেও আহ্বান জানাতে শোনা যায় তাঁকে। হিংসায় উস্কানি জোগানো থেকে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ওঠে ঋতম্ভরার বিরুদ্ধে। মসজিদে ভাঙচুর চলাকালীন উন্মত্ত ভিড়কে তিনি উৎসাহ জোগান বলেও অভিযোগ। সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে উস্কানি জোগানোয় গ্রেফতারও হন। ২০২০ সালে বিশেষ আদালত বাকিদের সঙ্গে তাঁকেও মুক্তি দেয়। এদিন সংবাদমাধ্যমে ঋতম্ভরা জানান, আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে ভগবান রামচন্দ্রই শক্তি জুগিয়েছিলেন তাঁদের।