নয়াদিল্লি: জল জীবন, কিন্তু আগামী দিনে সেই 'জীবন'ই বিপন্ন হতে চলেছে জলের অভাবে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রসংঘের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের দলের তরফে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে। আশঙ্কার কথা প্রকাশ করে জানান হয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের কয়েক কোটি কোটি মানুষ জলসঙ্কটের মধ্যে পড়তে চলেছেন। COP26 সামিটের সেই অনুষ্ঠান থেকেই জল সংরক্ষণের আহ্বানও জানান হয়েছে। 


সংবাদসংস্থা এএফপির একটি প্রতিবেদনে WMO -এর প্রধান পেটেরি তালাস বলেন, "আসন্ন জলসঙ্কট মোকাবিলা করতে এখন থেকেই লড়াই শুরু করতে হবে আমাদের।" পানীয় জলের হাহাকার বিশ্বের নানা প্রান্তে দেখা যায়। তা মরুদেশ হোক কিংবা পাহাড়ি অঞ্চল এমনকী উপকূলবর্তী এলাকাতেও। তবে ২০৫০ সালের মধ্যে তা প্রকট আকার ধারণ করতে চলেছে বলেই সতর্ক করা হয়েছে বিশ্ববাসীকে। কমপক্ষে এক মাসের জন্য সেই দৃশ্য দেখতে পারে প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ। 


এই সামিটে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেই 'The State of Climate Services 2021: Water'-এ বলা হয়েছে যে পৃথিবীর স্বাভাবিক আবহাওয়াতে বদল এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে চোখের পলকেই। কখনও অতিরিক্ত গরম, কখনও আবার চরম বৃষ্টি, প্রচন্ড ঠাণ্ডা...এই বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের একটি জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন গ্লাসগোতে ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  


WMO এর তরফে বলা হয়েছে হত ২০ বছর ধরে পৃথিবীর অভ্যন্তরে সঞ্চিত জলের স্তর অর্থাৎ পৃষ্ঠতলের জলস্তর, যা পানযোগ্য, তা কমছে। আবার বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বরফও গলছে পাল্লা দিয়ে। প্রায় ১ সেন্টিমিটারের বেশি বরফের উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে জলের চাহিদা এবং জল সংরক্ষণের এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। কারণ পৃথিবীতে ৩ ভাগ জলের মাত্র ০.৫ শতাংশ খাওয়ার যোগ্য। মিষ্টি জলের আকাল তাই দেখতে চলেছে বিশ্ব। 


সংবাদসংস্থা এএফপি   WMO -এর প্রধান পেটেরি তালাস-এর মন্তব্যকে উদ্ধৃত করে বলে, "তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন হচ্ছে, যার ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন ও কৃষিজমিতে সেই জলের সঞ্চয় কমছে। যার ফলে খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর বড় প্রভাব পড়ছে।" এই সঙ্কটের ফ্রিকোয়েন্সি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। 


দেখা গিয়েছে বিশ্বে ২০০০ সাল থেকে বন্যা সংক্রান্ত দুর্যোগও বৃদ্ধি পেয়েছে রেকর্ডহারে। প্রায় ১৩৪ শতাংশ। বর্তমান উষ্ণতার কারণে আমাদের বায়ুমণ্ডলে সাত শতাংশ বেশি আর্দ্রতা রয়েছে এবং এটি বন্যায়ও ভূমিকা রাখছে, এমনটাই জানান হয়েছে। এর মধ্যে এশিয়া মহাদেশেই ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। নদীমাতৃক দেশগুলি সেই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। তাই আসন্ন দিনে এই সকল এলাকাগুলিকে আরও সচেতন হতে হবে বলে জানান হয়েছে।