বাজেট অধিবেশনে বরাবরই চর্চায় থাকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের শাড়ি। এবছরও তার অন্যথা হয়নি। আজকের বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রীর পরনে ছিল মধুবনি শাড়ি। সমঝদারের জানেন বিহারের এই জনপ্রিয় শিল্পকলা শাড়িতে থাকা মানে তার গুণমান কতটা বেড়ে যায়। আর সেই শাড়িই এবার ছিল নির্মলা সীতারমনের পরনে। তবে এই মধুবনি শাড়ি আর পাঁচটা সাধারণ শাড়ির মতো নয়। এই শাড়ি তৈরি করেছেন, পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্ত দুলারি দেবী। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এই মধুবনি শাড়ি উপহার দিয়েছেন দুলারি দেবী। আর তাঁর সম্মান রেখে এই শাড়িই বাজেট অধিবেশনে পরেছিলেন নির্মলা সীতারমন। 


বিহারের মধুবনি জেলায় মিথিলা আর্ট ইনস্টিটিউটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল বিহারের এই জনপ্রিয় শিল্পী দুলারি দেবীর। ওই সাক্ষাতের সময়েই নির্মলা সীতারমনকে এই মধুবনি শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন দুলারি দেবী। অনুরোধ করেছিলেন, এই শাড়ি অর্থমন্ত্রী যেন বাজেট অধিবেশনের দিন পরেন। সেই অনুরোধ রেখেছেন তিনি। সংবাদ সংস্থা এএনআই- কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুলারি দেবী জানিয়েছেন, বাজেট অধিবেশনে তাঁর দেওয়া শাড়ি পরে নির্মলা সীতারমনকে দেখে খুবই খুশি হয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি শিল্পী জানিয়েছেন, এই শাড়ি তৈরি করতে প্রায় এক মাস সময় লেগেছে দুলারি দেবীর। 


দুলারি দেবী আরও জানিয়েছেন, এই শাড়ি তৈরি হয়েছে বাংলোরি সিল্কের উপর। এই বিশেষ ধরনের সিল্কের শাড়ির উপর করা হয়েছে সূক্ষ্ম মধুবনি কাজ। দুলারি দেবীর হাতের তৈরি এই শাড়ি যে নির্মলা সীতারমন বাজেট অধিবেশনে পরেছেন, তা বিহার তথা সারা দেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের। অফ-হোয়াইট খোলের এই শাড়িতে রয়েছে সরু সোনালি পাড়। আর সেই পাড় ঘেঁষা অংশেই নীল-সহ আরও অনেক রং দিয়ে রয়েছে মধুবনি কাজ। চওড়া জরি পাড়ের লাল ব্লাউজ এবং অফ-হোয়াইট শালের সঙ্গে বাজেট অধিবেশনের দিন এই সুদৃশ্য মধুবনি শাড়িটি পরেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তাঁর হাতে ছিল 'বই-খাতা', লাল কাপড়ে মোড়া ট্যাবলেট। তার উপরে রয়েছে সোনালি রঙে জাতীয় প্রতীক। এই প্রথম নয়, এর আগেও ঐতিহ্যবাহী শাড়ি (উইভ অ্যান্ড ফ্যাব্রিক) বাজেট অধিবেশনে পরেছেন নির্মলা সীতারমন। 


মধুবনি শাড়ির নির্মাতা দুলারি দেবীর জীবনযাত্রা সত্যিই অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো। মৎস্যজীবীদের পরিবার থেকে এসেছেন দুলারি দেবী। তাঁর পরিবারের কারও সঙ্গেই মধুবনি শিল্পের যোগাযোগ নেই। তবে দুলারি দেবী কাজ করতেন প্রখ্যাত মধুবনি চিত্রশিল্পী কারপুরী দেবীর সঙ্গে। সেখান থেকেই মধুবনি শিল্পের সঙ্গে হাতেখড়ি তাঁর। বিয়ে হয়েছিল অনেক অল্প বয়সেই। মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন দুলারি দেবীকে। হারিয়েছেন সন্তানকেও। দীর্ঘদিন লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেছেন। কিন্তু কখনও হার মানেননি। ১০ হাজারের বেশি মধুবনি চিত্র এঁকেছেন তিনি। সমাজকে দিয়েছেন সচেতন বার্তা। বাল্যবিবাহ, এইডস, কন্যা ভ্রূণ হত্যা- এইসব বিষয়ে সমাজন শোধনের বার্তা নিজের আঁকার মাধ্যমে দিয়েছেন দুলারি দেবী। দেশজুড়ে ৫০- এর বেশি প্রদর্শনী ইতিমধ্যেই করা হয়ে গিয়েছে তাঁর। ১০০০- এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে তাঁর।