নয়াদিল্লি: লকডাউনে দেশের অনেক জায়গাতেই জনজীবন পুরোপুরি স্তব্ধ। কোথাও কোনও গাড়িঘোড়া নেই। শুনসান রাস্তাঘাট। বাড়ির বাইরে বেরনোর অনুমতি নেই। কিন্তু তাতে দমানো গেল না উত্তরপ্রদেশের কালকু প্রজাপতিকে। ২৫ এপ্রিল বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাঁর। কিন্তু প্রশাসনকে অনেক অনুনয়-বিনয় করে অনুমতি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত পাত্রীপক্ষকে দেওয়া কথা রাখতে সটান সাইকেল চালিয়ে একাই চলে গেলেন বিয়ে করতে। কার্যত অসাধ্য সাধন করলেন ২৩ বছরের ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করা পেশায় চাষি কালকু।
হামিরপুর জেলার পৌথিয়া গ্রামের এই যুবক প্রশাসনের সবুজ সঙ্কেতের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও যখন দেখলেন, কোনও সাড়া নেই, তখন সাইকেলেই লখনউয়ের প্রায় ২৩০ কিমি দক্ষিণে মাহোবা জেলায় হবু স্ত্রী রিঙ্কির বাড়ি রওনা দেন। প্রায় ১০০ কিমি সাইকেল চালিয়ে পৌঁছন সেখানে। কালকু বলেছেন, স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানের অনুমতি মেলেনি। কাজেই একা ওখানে সাইকেলে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। ওঁরা বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে ফেলেছিলেন, নির্ধারিত দিনের বিয়ের সব আয়োজনও সারা হয়ে গিয়েছিল।
চার-পাঁচ মাস আগেই বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হয়, মেয়ের বাড়ি থেকে ফোনে সব জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেজন্য ছেলে ওখানে গিয়েছিল বলে জানান কালকুর বাবা। কালকু বলেছেন, মোটরসাইকেল থাকলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তাই বাইসাইকেলই ঠিক। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মুখে রুমাল বেঁধে, জিনস, টি-শার্ট চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
গ্রামের মন্দিরে নমো নমো করে ঘরোয়া পোশাকেই বিয়ে হয়। পাত্র-পাত্রী ক্যামেরার সামনে পোজ দেন মুখ ঢাকা অবস্থায়।
এরপর বিয়ে করা বউকে সাইকেলের পিছনের সিটে চাপিয়েই বাড়ি ফেরেন কালকু। পরে তিনি বলেছেন, দুজনের ভার একা টেনেছি। পা দুটো যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছিল মনে হয়। পরে ওষুধ খেতে হয়েছে।
লকডাউন ওঠার অপেক্ষায় আছেন তিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কার্ড ছাপিয়ে গ্রামের লোকজনকে ডেকে খাওয়াবেন, বিয়ের বাকি সব আচার-অনুষ্ঠানও সেরে ফেলবেন।
কিন্তু লকডাউন প্রত্যাহারের পরও তো বিয়ে করতে পারতেন ? কালকু জানিয়েছেন, মায়ের শরীরটা ভাল যাচ্ছে না, তার ওপর সংসার সামলানোর কেউ নেই। তাই এমন তাড়া। তাছাড়া, লকডাউন কতদিনে উঠবে, তার কোনও নিশ্চয়তাই নেই।