নয়াদিল্লি: আমলা পদে বাইরে থেকে, সমান্তরাল ভাবে নিয়োগে বড় নির্দেশ কেন্দ্রের। এই ধরনের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করতে নির্দেশ Union Public Service Commission-কে। UPSC-কে এই মর্মে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশ মেনেই বিজ্ঞপ্তি তুলে নিতে বলা হয়েছে। (UPSC Lateral Entry Ad)


অতিসম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্ম সচিব এবং অধিকর্তা পদে ৪৫ জনকে সরাসরি নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে UPSC. তাদের এই বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। সংরক্ষণের সুযোগ না দিয়ে, সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার ঘনিষ্ঠদের সরাসরি নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহল গাঁধী। সেই নিয়ে বিতর্ক দেখা দিতে, মঙ্গলবার বিজ্ঞাপন বাতিলের জন্য UPSC-কে চিঠি দিলেন জিতেন্দ্র। (IAS Recruitment)


UPSC-কে লেখা চিঠিতে জিতেন্দ্র জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের আগে থেকে এভাবে নিয়োগ হলেও, বাইরে থেকে সরাসরি আমলা নিয়োগের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ন্যায় নীতি এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্ন জড়িয়ে। বিশেষ করে সংরক্ষণের প্রশ্ন জড়িয়ে যেখানে, সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা প্রয়োজন। তাই UPSC বাইরে থেকে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। 


সম্প্রতি UPSC আমলা নিয়োগের যে বিজ্ঞাপন দেয়, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ২৪টি মন্ত্রকে যুগ্ম সচিব, ডিরেক্টর, ডেপুটি সেক্রেটারি-সহ ৪৫টি পদে প্রতিভাশালী ভারতীয়দের কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়। গোড়া থেকেই সেই নিয়ে বিতর্ক বাধে। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি ছিল, কর্পোরেট এবং শিক্ষা জগৎ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সরকারি পদে নিয়োগের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত। 



এর পাল্টা বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI-র প্রধান মাধবী বুচের কথা উল্লেখ করেন রাহুল। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপির যে অভিযোগ, তাতে নাম জড়িয়েছে মাধবীর। কর্পোরেট জগৎ থেকেই মাধবী SEBI-তে যোগ দিয়েছিলেন। এমনকি কর্পোরেট জগৎ থেকে এসে SEBI প্রধানের পদ অলঙ্কৃত করা প্রথম আধিকারিক হন মাধবী। 


তাই রাহুলের বক্তব্য ছিল, "কর্পোরেট জগতের প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে বসে কী কেরামতি দেখান, SEBI-ই তার জ্বলন্ত উদাহরণ। UPSC-তে রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘের মাধ্যমে নিয়োগ করে নরেন্দ্র মোদি সংবিধানের উপর আক্রমণ করছেন। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে সরাসরি নিয়োগ করে তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণ ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সামাজিক ন্যায়ের পরিকল্পনায় আঘাত করা হচ্ছে এভাবে। IAS-এর বেসরকারিকরণ করে সংরক্ষণ শেষ করে দেওয়াই মোদির গ্যারান্টি'। সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও বিষয়টি নিয়ে সরব হন। ৪৫টি পদে নিয়ম মেনে নিয়োগ হলে ২৩টি পদে তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসররা সুযোগ পেতেন বলে জানান তিনি।


সেই নিয়ে গত কয়েকদিন টানাপোড়েন চলছিল। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞাপন তুলে নিতে বলল কেন্দ্র। সরকারি ক্যাডারদের বাদ রেখে বাইরে থেকে সরাসরি সরকারি আমলা নিয়োগের প্রক্রিয়াকে Lateral Entry বলা হয়। বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদনকারীদের আহ্বান জানানো হতো। ২০১৮ সালে মোদি সরকারের আমলেই এই প্রক্রিয়ায় সিলমোহর পড়ে, তার আগে পর্যন্ত সরকারি সিভিল সার্ভেন্টরাই আমলা হতেন। 


এ প্রসঙ্গে সরকারের যুক্তি ছিল, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA সরকারই প্রথম এই প্রস্তাব আনে। ২০০৫ সালে Second Administrative Reforms Commission গঠন করা হয়, যার আওতায় IAS-এ সংস্কারের পরিকল্পনা ছিল। অতীতে বাইরে থেকে সরাসরি নিয়োগও হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র। তবে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞাপন বাতিলের নির্দেশই দিয়েছেন তিনি।