সানা: একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন, অন্য দিকে, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন। যুদ্ধ থামার অপেক্ষায় দিন গুনছে গোটা বিশ্ব। আর সেই আবহেই ইয়েমেনে হামলা চালাল আমেরিকা। দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন Houthis-এর শিবির লক্ষ্য করে পর পর বোমাবর্ষণ করল। তাতে এখনও পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। ইজরায়েল বনাম প্যালেস্তাইন যুদ্ধে প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়িয়েছিল Houthis. ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলাও চালায় তারা। সেই Houthis-এর উপরই হামলা চালাল আমেরিকা। (US Bombs Yemen)


জানুয়ারি মাসে আমেরিকার মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর এই প্রথম ইয়েমেনে হামলা চালাল আমেরিকা। ব্রিটেনেও এব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করে। এর আগে, ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আমেরিকা। Houthis-কে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। তার পরই রবিবার সরাসরি হামলা। সংবাদ সংস্থা AFP জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের দখলে থাকা রাজধানী সানায় পর পর তিনটি বিস্ফোরণ শোনা যায়। বসতি এলাকা থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায় আকাশে। (Houthis Attacked by US)


পাশাপাশি, উত্তরের সাদা, যা Houthis-এর গড় হিসেবে পরিচিত, সেখানেও হামলা চালানো হয়েছে বলে খবর। হামলায় শিশু-সহ অনেকের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। আহতদের অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। Houthis-এর স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ বিভাগের তরফে এমনই দাবি করা হয়েছে। Houthis-এর Andarollah ওয়েবসাইট জানিয়েছে, সাদাতেই ১০ জন মারা গিয়েছেন কমপক্ষে। সাদার আলশাফ থেকে দু'জনের মৃত্য়ুর খবর মিলেছে। তাদের দাবি, ইয়েমেনে আমেরিকা এবং ব্রিটেন আগ্রাসন দেখাচ্ছে। তারা নৃশংস অপরাধ ঘটিয়ে চলেছে বলে দাবি সংগঠনের। 



আমেরিকার সেন্ট্রাল কম্যান্ড (CENTCOM) হামলার ছবি সামনে এনেছে। যুদ্ধবিমান থেকে সেনাদের অবতরণ এবং বোমা বিস্ফোরণে বাড়িঘর ভেঙে পড়ার ছবি প্রকাশ করেছে তারা। বলা হয়েছে, আমােরিকার স্বার্থ রক্ষা করতে, শত্রুপক্ষকে নিকেশ করতে এবং জলপথে স্বাধীন বিচরণের অধিকারের জন্যই এই হামলা। ব্রিটেনেরে তরফে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি এ নিয়ে। 


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, লোহিত সাগরে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে Houthis-ই সবচেয়ে বড় বাধা। তাই লক্ষ্যে পৌঁছনো না পর্যন্ত আমেরিকা পূর্ণশক্তি প্রয়োগ করবে লড়বে আমেরিকা। তাঁর বক্তব্য, 'সমস্ত Houthis জঙ্গিদের বলছি, তোমাদের সময় ফুরিয়েছে। আজ থেকে হামলা বন্ধ করতে হবে। নইলে তোমাদের উপর নরক নেমে আসবে। আমেরিকার মানুষ প্রেসিডেন্টকে হুমকি দিও না। আটকাতে যেও না বাণিজ্য। এমন ঘটলে আমেরিকা তোমাদের দেখে নেবে'। গাজায় ইজরায়েল ধ্বংসলীলা চালানোর সময় লোহিত সাগরে এই Houthis-এর হাতেই বার বার আক্রান্ত হয় ইজরায়েলের। এবার তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাল আমেরিকা।




ইরানকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, 'ইরানকে বলছি, অবিলম্বে Houthis-কে সমর্থন করা বন্ধ করতে হবে। আমেরিকার মানুষ, তাঁদের প্রেসিডেন্টকে হুমকি দেওয়া ঠিক হবে না, যিনি কি না ঐতিহাসিক জয় হাসিল করেছেন'।


গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন Houthis-র হাতেই ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ইরান সমর্থক 'Axis of Resistance' গোষ্ঠীর সদস্য তারা, যারা ইজরায়েল এবং আমেরিকার বিরোধী। গাজা যুদ্ধ চলাকালীন ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ছোড়ে তারা। লোহিত সাগরের ওই অঞ্চল দিয়ে পৃথিবীর ১২ শতাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য হয়। Houthis-এর জন্য বিভিন্ন সংস্থা ওই রুট এড়িয়ে  যেতে শুরু করে।  সমর্থনের জন্য Houthis-কে ধন্যবাদ জানায় প্যালেস্তাইনের হামাস। আমেরিকা যেভাবে ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে, তাতে হামাস 'আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী', 'সার্বভৌমিকত এবং স্থিতিশীলতার' উপর আঘাত বলে উল্লেখ করেছে।


চলতি মাসের শুরুতেই Houthis-কে বিদেশি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে আমেরিকা। তাদের নিষিদ্ধ করা হয়। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল জানান, ১৭৪ বার আমেরিকার জাহাজে হামলা চালিয়েছে Houthis. ২০২৩ সাল থেকে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা হয়েছে ১৪৫ বার।