নয়াদিল্লি: অতি বড় নাস্তিকও প্রিয়জনের মৃত্যুতে শ্রাদ্ধশান্তির আয়োজন করেন। কিন্তু এই ভারতে এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে শ্রাদ্ধশান্তির প্রচলন নেই একেবারেই। আজ বলে নয়, গত ১০০ বছরে কোনও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়নি সেখানে। এমনকি পিতৃপক্ষে ব্রাহ্মণরাও ঢোকেন না ওই গ্রামে। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে নয়, এক অভিশাপের দরুণই গ্রামের বাসিন্দারা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান এড়িয়ে চলেন। (Uttar Pradesh News)

উত্তর প্রদেশের সম্ভলে ভাগতা নাগলা গ্রামে লোকসংখ্যা প্রায় ২৫০০। সংখ্য়ার নিরিখে যাদবরা বেশি হলেও, ব্রাহ্মণ, সংখ্য়ালঘু মুসলিমরাও রয়েছেন। সেখানে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের কোনও চল নেই। গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই রীতি বজায় রয়েছে। এমনকি পিতৃপক্ষ চলাকালীন ব্রাহ্মণদের ডাকা হয় না। ভিক্ষা দেওয়া হয় না বলে ঢোকেন না ভিক্ষুকরাও। ব্রাহ্মণ পরিবারগুলিও এই সময় কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন না। (Pitra Paksh)

কিন্তু কেন এমন রীতি? কবে থেকেই বা চলছে? গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, আজ থেকে শতাধিক বছর আগে এক ব্রাহ্মণ মহিলা ওই গ্রামে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে এসেছিলেন। ভীষণ বর্ষণ চলছিল সেই সময়। ফলে নির্ধারিত সময়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। তাঁকে গ্রামেই থেকে যেতে হয়েছিল বেশ কয়েক দিন। দুর্যোগ কাটলে বাড়ি ফিরে যান তিনি। কিন্তু স্বামী তাঁকে গ্রহণ করেননি। বরং চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, বের করে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে।

কোথায় যাবেন, কী করবেন ভেবে না পেয়ে, ওই গ্রামেই ফিরে আসেন মহিলা। নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য ওই গ্রামকেই দোষারোপ করেন তিনি। রাগে অভিশাপ দেন যে, ভবিষ্যতে ওই গ্রামে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসবে, যা থেকে কেউ রক্ষা পাবেন না। ওই অভিশাপ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানুষজন। সেই থেকেই গ্রামে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান বন্ধ। আজও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয় না সেখানে। 

ভাগতা নাগলার গ্রামের প্রধান শান্তিদেবী এবং তাঁর স্বামী রামদাস জানিয়েছেন, ওই ঘটনার পর তাঁদের পূর্বপুরুষরা শ্রাদ্ধশান্তি বন্ধ করে দেন। আজও সেই ধারাই চলে আসছে। পিতৃপক্ষ চলাকালীন ভিক্ষুকরাও তাঁদের গ্রামের ধার মাড়ান না। গ্রামের বাসিন্দা হেতরাম সিংহ জানিয়েছেন, অভিশাপ না মেনে অতীতে বেশ কয়েক জন শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করেওছিলেন। কিন্তু তাঁদের ভয়ঙ্কর মাশুল গুনতে হয়, নির্বংশ হতে হয়। 

পিতৃপক্ষ কেটে গেলে যদিও গ্রামে ঢোকেন ব্রাহ্মণরা। বিবাহ অনুষ্ঠান, অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন।