দেহরাদূণ: দেশীয় পরিকাঠামোয় ভরসা করে বসে থাকা হয়নি শুধু। বিদেশ থেকেও আনা হয়েছিল অত্যাধুনিক ড্রিল মেশিন। কিন্তু পাহাড়ের গায়ে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয় সেই যন্ত্র। শেষ পর্যন্ত তাই মানুষের হাতেই ভরসা করা হয়। উত্তরাখণ্ডের ভেঙে পড়া সিল্কয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করে আনতে হাত লাগান উদ্ধারকারীরা। এর জন্য 'ব়্যাট-হোল মাইনিং' পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। সেই পদ্ধতি ধরে এগিয়েই মঙ্গলবার দুপুরে আটকে পড়া শ্রমিদের কাছে পৌঁছনো গেল। (Uttarakhand Tunnel Rescue)


'ব়্যাট-হোল মাইনিং' পদ্ধতি মাটির গভীরে পৌঁছনোর বিশেষ এক পদ্ধতি। এর মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছতে একেবারে সঙ্কীর্ণ গর্ত খোঁড়া হয়, যা দিয়ে গলতে পারেন একজনই। ইঁদুরের গর্তের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই পদ্ধতির এমন নামকরণ। ওই সরু গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে দিয়ে খনির নিচে পৌঁছন শ্রমিকরা।  তার পর কয়লা জড়ো করে, দড়ি দিয়ে টেনে উপরে তোলা হয়। তবে এই পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। (Rathole Mining Method)


ভারতের মেঘালয়ের মতো রাজ্যে এই ‘ব়্যাট-হোল মাইনিং' পদ্ধতিতেই কয়লা উত্তোলনের চল ছিল দীর্ঘ দিন ধরে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে কয়লা তোলায় প্রাণের ঝুঁকি থাকে। সঙ্কীর্ণ গর্ত খুঁড়ে নিচে নামার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিধিনিষেধও মানা হতো না অনেক ক্ষেত্রেই। তার জেরে মাটির নিচে দমবন্ধ হয়ে বা চাপা পড়ে মৃত্যু ঘটত অহরহ।


আরও পড়ুন: Uttarkashi Tunnel Collapse: উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আশার আলো, উদ্ধারকার্যের জন্য চলছে ভার্টিক্যাল ড্রিলিং


পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ২০১৪ সালে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল মেঘালয়ের কয়লাখনিগুলিতে এই ‘ব়্যাট-হোল মাইনিং' পদ্ধতির প্রয়োগ নিষিদ্ধ করে দেয়।সেই সময় ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল জানায়, বর্ষার মরশুমেও এই পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করার চল রয়েছে। অনেক সময় ওই সঙ্কীর্ণ গর্ত দিয়ে জল খনির নিচে পৌঁছে যায়। সেই জলে সলিল সমাধি হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। তাই অবিলম্বে এই পদ্ধতির প্রয়োগ বন্ধ হওয়া উচিত। 


উত্তরাখণ্ডে সুড়ঙ্গের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে সেই 'ব়্যাট-হোল মাইনিং' পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হয়। সোমবার হাত দিয়ে সঙ্কীর্ণ গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। এই কাজের জন্য ২৪ জন অভিজ্ঞ 'ব়্যাট-হোল মাইনিং' বিশেষজ্ঞকে আনা হয়। হাত দিয়ে গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু করেন তাঁরা। এক জন মাটি খোঁড়েন, অন্য জন মাটি সরান তড়িঘড়ি। যেমন যেমন গর্ত খোঁড়ার কাজ এগোয়, তার মধ্যে ৮০০ মিলিমিটার ব্যাসের পাইপ ঢোকানো হয়। তার মধ্য দিয়েই আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হয়।