নয়াদিল্লি: ওয়াকফ আইন নিয়ে এবার কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী সাত দিনেের মধ্য়ে কেন্দ্রকে জবাব দিতে হবে। রাজ্য সরকার এবং ওয়াকফ বোর্ডকেও এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে আদালতে। আর তত দিন ওয়াকফ বোর্ড এবং কাউন্সিলে নতুন কোনও নিয়োগ করা যাবে না। আগামী ৫ মে ওয়াকফ আইন নিয়ে ফের শুনানি রয়েছে শীর্ষ আদালতে। তার আগে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্য়ে মামলাকারীদের জবাব চাওয়া হয়েছে। (Waqf Law Case)

বুধবারই ওয়াকফ আইন নিয়ে কেন্দ্রের সলিসটর জেনারেল তুষার মেহতার সঙ্গে  বাদানুবাদ হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার। আদালত অন্তর্বর্তী রায় দিতে চাইলেও, আরও একদিন তাদের অবস্থান শোনার জন্য আবেদন জানায় কেন্দ্র। সেই মতো বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু হলে জানিয়ে দেয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওয়াকফ বোর্ডে এবং কাউন্সিলে নতুন কাউকে নিয়োগ করা যাবে না, ইতিমধ্যেই ওয়াকফ হিসেবে বিবেচিত কোনও সম্পত্তির রূপান্তর ঘটানো যাবে না। মুসলিমদের দাতব্য় সম্পত্তি নিয়ে আপাতত কোনও পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না সরকার। (Supreme Court)

এদিন শুনানি চলাকালীন তুষার মেহতা আরও এক সপ্তাহ সময় চান। ওই সময়ে ৯ এবং ১৪ নম্বর ধারায় কোনও নিয়োগ হবে না বলে জানান তিনি। ওই ধারাতেই ওয়াকফ কাউন্সিল এবং বোর্ডে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা সীমিত রাখা হয়। ২২ জনের মধ্যে একটিতে আটজন এবং ১১ জনের মধ্যে অন্যটিতে চার জন মুসলিম সদস্য রাখার কথা বলা হয়েছে সংশোধিত আইনে, যা নিয়ে একদিন আগেই প্রশ্ন তুলেছিল আদালতে। তাহহলে হিন্দুদের বোর্ডে মুসলিমদের রাখা হবে কি না, জানতে চাওয়া হয় কেন্দ্রের কাছে 

এর আগে, বুধবার ওয়াকফ আইন নিয়ে শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রের আইন নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলে আদালত। ওয়াকফ বোর্ডের ২২ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৮ জন কেন মুসলিম, প্রশ্ন তোলা হয়। এতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার সঙ্গে কার্যত বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার। সেই নিরিখে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে মামলার শুনানি হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন মেহতা। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, "বিচারপতির আসনে যখন বসি আমরা, ধর্ম থাকে না আমাদের। আমাদের কাছে সবপক্ষই সমান।"। এর পরই CJI জানতে চান, "তার মানে কি বলতে চাইছেন, হিন্দুদের দাতব্য ট্রাস্টের বোর্ডে মুসলিমদের জায়গা হবে? প্রকাশ্যে বলুন।" প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, "২৬ নং ধারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। এটা সব সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য।"

আদালত প্রস্তাব দেয়-

১) আদালতে কোনও সম্পত্তি যদি ওয়াকফ বলে চিহ্নিত হয়ে থাকে, সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে শুনানি চলাকালীন কোনও মতেই সেটিতে রদবদল ঘটানো যাবে না। সেই সম্পত্তি কোনও ব্যক্তি ওয়াকফ হিসেবে দান করে থাকুন বা ওয়াকফ চুক্তি হয়ে থাকুক, সব ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ প্রযোজ্য।

২) কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ না কি সরকারি সম্পত্তি, জেলাশাসকের নির্দেশে তদন্ত চলাকালীন সেই সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলে গন্য করা হবে না বলে উল্লেখ রয়েছে আইনে। কিন্তু এখনই সেই নির্দেশ কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছে আদালত। 

৩) ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কমিটির সব সদস্যকে মুসলিম হতে হবে। একমাত্র ব্যতিক্রম Ex Officio members, অর্থাৎ সরকারি আধিকারিক অথবা কোনও পক্ষের প্রতিনিধি হওয়ার দরুণ যাঁরা আপনাআপনিই বোর্ডের সদস্যপদ পান, তাঁদের ক্ষেত্রে ধর্মপরিচয় বাধ্যতামূলক নয়।

আদালত গতকালই অন্তর্বর্তীকালীন রায় দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করে। কিন্তু কেন্দ্রের হয়ে বাড়তি সময় চেয়েছিলেন তুষার মেহতা।