কলকাতা: গতকাল পুরুলিয়াতে জোড়া সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ ওই জেলাতেই তিনটি জনসভা করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রঘুনাথপুর, মানবাজার ও পুরুলিয়া - এই তিনটি বিধানসভায় দলীয় প্রার্থীদের হয়ে নির্বাচনী প্রচার করলেন তিনি। অভিষেক বলেছেন, উন্নয়নের প্রশ্নে বিজেপিকে ১০-০ গোলে হারাবেন। না পারলে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখব না।


রাজ্যে প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন বিজেপি নেতারাও। অভিষেক এদিনের জনসভাগুলিতে বিজেপির আক্রমণের জবাব দিয়েছেন। সেইসঙ্গে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিয়েছেন।


এদিন রাজ্যে ভোটের প্রচারে এসে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, তৃণমূল শাসনে পশ্চিমবঙ্গে অরাজকতা চলছে... বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা এখানে ঢুকে গরিবের রেশন ভোগ করছে... বিজেপি ক্ষমতায় এলে অন্যায়ের অবসান হবে।


পাল্টা পুরুলিয়ারই মানবাজারের সভা থেকে আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক বলেছেন, অনুপ্রবেশকারী যদি বাংলায় ঢোকে, তাহলে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স কী করছিল। অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আগে ছিলেন রাজনাথ সিংহ। তাহলে তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত না? 


লরামপুরের সভা থেকে ফের একবার নরেন্দ্র মোদির সবকা সাথ সবকা বিকাশের স্বপ্ন ফেরি করার চেষ্টা করেন যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর কংগ্রেস, তারপর কমিউনিস্ট, তারপর তৃণমূল রাজ্যকে শেষ করেছে... গরিবি বেকারত্ব বেড়েছে... সবকা সাথ সবকা বিকাশই মোদির স্বপ্ন।


অন্যদিকে, বিজেপির উদ্দেশে তথ্য পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্কে বসার কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অভিষেকও। তিনি বলেছেন, তথ্য-পরিসংখ্যান বেছে নিন। স্টেজ আপনার, সঞ্চালক আপনার। এক ঘণ্টা আগে বলবেন, আমি যাব। দশ শূন্য গোলে না হারালে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখব না... একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিজেপি নেতাদের ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতে হচ্ছে... লকডাউনের সময় কারও টিকি দেখা যায়নি।


আমফানের ত্রাণ বন্টনে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। এই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেছেন, আমফানে টাকা দিয়ে বলছে মোদির টাকা! এ তো রাজ্যের টাকা। আপনার পকেট থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে গিয়ে ১০ টাকা দিচ্ছে।


রাজ্যের মানুষকে তৃণমূল সরকার কেন্দ্রের আয়ুষ্মাণ প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করছে বলে বিজেপির অভিযোগ। এর জবাব দিতে গিয়ে অভিষেক বলেছেন, বাড়িতে পাকা ছাদ থাকলে, স্মার্টফোন থাকলে, ফ্রিজ থাকলে, আয়ুষ্মান ভারত পাবেন না। কিন্তু সবাইকে স্বাস্থ্যসাথী দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


গতকাল অমিত শাহর সভায় না যাওয়া নিয়েও কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেছেন,অমিত শাহর সভায় লোকই হয়নি, বলছে কপ্টারে যান্ত্রিক ত্রুটি।


সম্প্রতি নন্দীগ্রামে গিয়ে আহত হয়েছিলেন মমতা। এখন হুইল চেয়ারে চেপে দলের প্রচারের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অভিষেক বলেছেন, ভাঙা পায়ে যুদ্ধ হবে, জয় ছিনিয়ে আনব, বলেছেন আমাদের নেত্রী। তাঁকে হারানোর জন্য নেতারা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করছেন।


বিজেপিকে নিশানা করে তাঁর প্রশ্ন, কৃষকদের জন্য প্রকল্প   তো করেছেন। তাহলে ১০ লক্ষ কৃষক কেন আন্দোলনে?’
কৃষি বিল পাস করিয়ে। গায়ের জোরে তা প্রয়োগ করতে গিয়েছেন। 


বিজেপি সোনার বাংলা গড়ার দাবিকে নস্যাৎ করে অভিষেক বলেছেন, বিজেপি বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত নয়। তিনি বলেছেন, বাংলা জানে না, বলতে পারে না, বলছে সোনার বাংলা গড়ব। সোনার বাংলা গড়ব বলছেন, কিন্তু সোনার ভারত হয়নি কেন?


গত বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়াতে ভাল ফল করে তৃণমূল। জেলার ৯টি বিধানসভার মধ্যে ৭টিই তারা দখল করে। ২টি আসন পায় কংগ্রেস। শূন্য হাতে ফিরতে হয় বিজেপিকে। কিন্তু লোকসভা ভোটে সেই হিসেব উল্টে যায়।পুরুলিয়া লোকসভা আসনটি দখল করা ছাড়াও এই লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে ৭টি বিধানসভাতেও তৃণমূলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে জেলায় হারানো জমি পুনরুদ্ধারে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে ঘাস-ফুল শিবির।