কলকাতা: একুশের মহাযুদ্ধ জিততে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম বড় হাতিয়ার 'সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী'। যাঁরা কোনওরকম স্বাস্থ্য পরিষেবার আওতায় নেই, এমন সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য বছরে পাঁচ লক্ষ টাকার ক্যাশলেস স্বাস্থ্যবিমা। ভোটের বছরের গোড়ায় এবার নিজের পাড়া থেকে তার ব্র্যান্ডিং করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নিজের পাড়ায় 'দুয়ারে সরকার' কর্মসূচি পালনের সময় লাইনে দাঁড়িয়ে 'স্বাস্থ্যসাথী' কার্ড নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়েপাধ্যায়।
কলকাতা পুরসভার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মমতা। ওই ওয়ার্ডেরই হরিশ মুখার্জি রোডের জয়হিন্দ ভবনে আয়োজিত হয় দুয়ারে সরকার শিবির। কলকাতা পুরসভার অডিটোরিয়ামে বেলা এগারোটা নাগাদ প্রতিবেশীদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তিনজন প্রতিবেশীর পিছনে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসাথীর স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর এভাবে এলাকাবাসীর সঙ্গে কার্ড নিতে লাইনে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, নিজেকে সব সময় সিএম বলেন না উনি। সব সময় বলেন কমন ম্যান অর্থাত্ সাধারণ নাগরিক। সহ নাগরিকদের সঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের গর্ব, সাধারণ ভাবে তৃণমূল স্তরে ঘোরাফেরা করেন। তৃণমূল স্তরে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। লাইনে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুলিস কমিশনার অনুজ শর্মা। তবে বিষয়টিকে ড্রামা বলে কটাক্ষ করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, উনি ড্রামা করেন। উনি কি এলিজিবল? নোটবন্দির সময় রাহুল গান্ধীও টাকা তুলেছিলেন। পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার ঘাপলা করে দশ হাজার টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। মানুষ কি বোঝে না এসব ড্রামা!
পাল্টা জবাবে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, দিলীপবাবু একজন রাজনৈতিক নেতা। এটা ভেবে লজ্জা হয়। দিলীপ ঘোষ জানেন না, নাটক কী। জন্মসূত্রেই দিলীপবাবুই আসলে নাটুকে। এজন্য আমাদের দুঃখ হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের অনেক কাছাকাছি। মানুষের প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসা রয়েছে, আজ সেটা প্রমাণিত হল। মমতা যা করলেন, তা অন্যদের অনুকরণযোগ্য। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ভোটের মুখে লাইনে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে তিন কৌশলী বার্তা দিলেন নেত্রী। প্রথমত, তিনি আম আদমির মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতার সর্বোচ্চ পদে থেকেও সাধারণের সঙ্গে তিনি মিশে যেতে পারেন। তৃতীয়ত, রাজ্য প্রশাসনের সর্বাধিনায়িকা হয়েও সুবিধাভোগী নন তিনি।
ক্ষমতা, লোভ, কাটমানি, দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধী শিবির যখন রাজ্যের শাসক দলকে লাগাতার নিশানা করছে, তখন ব্র্যান্ড মমতার স্বাস্থ্যসাথীর ব্র্যান্ডিং থেকে বার্তা পৌঁছেছে তাঁর নিজের দলেও। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথায়, একজন মুখ্যমন্ত্রী যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কার্ড নেন, তাহলে আমাদের মতো নেতাদেরও মানুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কার্ড নিতে লজ্জা হওয়ার কথা নয়। এই বার্তাটাই মুখ্যমন্ত্রী দিতে চাইছেন।