বাংলায় বৈশাখ শুরু মানেই অফিসিয়ালি গরমকাল শুরু। গরমে গলদঘর্ম হলেও এখন পর্যন্ত তীব্র তাপদাহ টের পায়নি বাংলা। সর্বভারতীয় আবহাওয়া দফতর অনুসারে এবার মার্চ থেকেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে স্বাভাবিকের থেকে বেশি তাপমাত্রা। এবার এপ্রিল শুরুর আগে থেকেই তাপমাত্রা নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। আবহবিদ এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে ভারত ও পাকিস্তানের মানুষ আগামী কয়েক মাসে তীব্র গরমে ছটফট করবেন। এমন গরম হয়ত পড়বে যে, আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে। আবহবিদদের অনুমান, এমন বাড়বে তাপমাত্রা যা ছুঁয়ে ফেলতে পারে আমেরিকার ডেথ ভ্যালির পারদ।
ভারতের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিমে রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে এপ্রিলের প্রথম দুই সপ্তাহেই তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে। রাজধানী দিল্লিতে তাপমাত্রা গড়ের চেয়ে ৫ ডিগ্রি বেশিই থাকছে ইদানীং। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই মাসটা জুড়ে এমন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরমই থাকবে।
প্রচন্ত গরমের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কৃষি
গ্রামীণ এলাকায় কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির ইতিমধ্যেই মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে। একদিকে ফসলের ক্ষতি হওয়ার চিন্তা আর অন্যদিকে খেতের কাজ করার সময় গরম সহ্য করার বিষয়টি চিন্তায় ফেলছে। এই গরমে ইতিমধ্যেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বাড়লে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
পাকিস্তান তাপমাত্রা থেকে অব্যাহত নয়
পাকিস্তানও এই তাপমাত্রা বৃষ্টি থেকে রেহাই পাবে না। ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকট এবং বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান । এই অবস্থায় তাপপ্রবাহ তাদের সমস্যা আরও গেরোয় ফেলতে পারে। পাকিস্তানের আবহাওয়া দফতর সতর্ক করেছে , ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে দেশের অনেক অংশে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ ডিগ্রি বেশি থাকবে। বলুচিস্তানে তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এমনিতেই বিদ্যুতের অভাবে অনেক জায়গায় দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, মানুষকে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ ছাড়াই থাকতে হচ্ছে। ফলে গরম বাড়লে এই পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ চিত্র
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) ভয়াবহ প্রভাব। কার্বন নির্গমন, বনাগ্নি, বেআইনি ভাবে অরণ্যধ্বংস, অপরিকল্পিত নগরায়ন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং পৃথিবীর তাপমাত্রাকে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। যদি সময় থাকতে সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী বছরগুলিতে পারদ বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাবে।
তীব্র তাপমাত্রা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
এখন প্রশ্ন উঠছে যে এই তীব্র তাপমাত্রা থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে? চিকিৎসকদের পরামর্ষ, দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাইরে বেরোনো না বেরতে পারলেই ভাল। প্রচুর পরিমাণে জন খাওয়া, হালকা পোশাক পরা, ছায়াঘেরা স্থানে থাকা জরুরি। দরকার শিশু-বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন নেওয়া।