সনৎ ঝা, দার্জিলিং: আসন্ন ভোটে উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা ইস্তেহার প্রকাশ করবে বিজেপি। শিলিগুড়িতে বসে দাবি করলেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। উন্নয়নের নামে বিভাজনের রাজনীতি করছে গেরুয়া শিবির। এই অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল।


২০১৯ এর লোকসভা ভোটে বিপুল পদ্ম ফুটেছিল উত্তরবঙ্গে। একুশের বিধানসভা ভোটে জয়ের সেই ধারা অব্যাহত রাখতে মরিয়া বিজেপি শিবির। অন্যদিকে, তৃণমূল তৎপর হারানো জমি পুনরুদ্ধারে। দুই শিবিরের লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করল বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য। তাঁর দাবি, এবার উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা ইস্তেহার করবে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা উত্তর দক্ষিণ আলাদা করতে চাই না। তবে এটা সত্যি উত্তরবঙ্গ বঞ্চনার শিকার। উত্তরের অনেক কিছু দক্ষিণের সঙ্গে মেলে না। সেকথা মাথায় রেখে আলাদা ইশতেহার তৈরির পরিকল্পনা। বিশেষ করে কৃষি ভিত্তিক শিল্প, আর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গে বড় ধরনের পরিকাঠামো প্রয়োজন ৷’’


বিজেপি মুখপাত্রের এই মন্তব্য সামনে আসতেই, বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগে সরব হয়েছে তৃণমূল। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, ‘‘আমরা উত্তর দক্ষিণ ভাগ করতে চাই না। উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ১১ বছরে প্রচুর কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, প্রতি জেলায় মেডিক্যাল কলেজে হয়েছে। প্রায় সব জেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। বড় বড় সেতু নির্মাণ হয়েছে। উত্তরে প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। মমতা থাকলে আরও উন্নয়ন হবে।’’


দু’দলের উন্নয়ন তরজায় উঠে এসেছে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির প্রসঙ্গ। বিজেপির অভিযোগ, শুধুমাত্র রাজনীতির স্বার্থে রায়গঞ্জে এইমসের আদলে হাসপাতাল গড়তে না দিয়ে, তা কল্যাণীতে স্থানান্তরিত করেছে রাজ্য সরকার। এতে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। শমীক ভট্টাচার্যের মতে, রায়গঞ্জে এইমস হতে দেয়নি রাজ্য সরকার। উত্তরে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল দরকার ৷ গৌতম দেবের মতে, উত্তরে জমি নিয়ে সমস্যা ছিল। তাই কল্যাণীতে হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাধাও নাচবে না, সাত মণ তেলও পুড়বে না।


উত্তরবঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ নতুন নয়। পৃথক গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে সঙ্গে নিয়ে এক দশকের বেশি সময় ধরে পাহাড়ে রাজনীতি করে এসেছে বিজেপি। বিমল গুরুং অন্তর্ধান পরবর্তী অধ্যায়ে কেন্দ্র পাহাড় থেকে বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর নবান্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগ করেন, বাংলা ভাগের চক্রান্ত করছে বিজেপি।


রাজ্য বিজেপির রিপোর্টের ভিত্তিতেই কেন্দ্র পাহাড় থেকে সিআরপিএফ তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি ৷ প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে চিঠিও দেন ৷ পাহাড় রাজনীতিতে পাশার দান এখন উল্টে গেছে। গেরুয়া সান্নিধ্য ছেড়ে বিমল গুরুং এখন তৃণমূলের দিকে। ভোটমুখী বাংলায় বিভাজনের রাজনীতির হাওয়া মোরগও এখন অন্য দিকে। উত্তরবঙ্গের জন্য বিজেপির পৃথক ইস্তেহারের ঘোষণায় নতুন মাত্রা পেল বিভাজন রাজনীতি বিতর্ক।