কলকাতা: ক্রোনোলজির আর একটা ধাপই বাকি রইল!মন্ত্রীত্ব ছেড়েছিলেন গত শুক্রবার।বিধায়পক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন ঠিক এক সপ্তাহর পর আরেক শুক্রবার দুপুরে।বিকেলে তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্য পদ ছাড়লেন।এবার সম্ভবত রবিবারই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দু অধিকারীর পর তৃণমূলের আরও এক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর গেরুয়া শিবিরে যোগদান কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এদিন রাজীব বললেন, মানুষের কাজ করতে গেলে একটি দলের ছত্রছায়ায় থাকতে হবে... নির্দল হয়ে মানুষের কাজ করা যায় না।


হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি।মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।আর বিজেপির পথে হাঁটার জল্পনা।
শুক্রবার এভাবেই বিধানসভা থেকে বেরোতে দেখা গেল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
শুক্রবার বেলা পৌনে বারোটা নাগাদবিধানসভায় যান তিনি। স্পিকারের ঘরে গিয়ে জমা দেন পদত্যাগপত্র। তিনি জানান, বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছি অধ্যক্ষের হাতে। কিছু প্রশ্ন ছিল। উত্তর দিয়েছি। খতিয়ে দেখবেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।

মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর রাজীব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর ক্ষোভের একটা বড় অংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। বলেছিলেন, আড়াই বছর আগে আমার দফতর বদল হয়। একটা জিনিস তখন আমার খারাপ লেগেছিল। ন্যূনতম সৌজন্য তখন আমি পাইনি। মন্ত্রী হিসেবে সেদিনও সব বৈঠক করেছি। আমাকে টিভিতে দেখতে হয়েছে যে আমাকে সরানো হয়েছে। আমি সেদিন অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়েছিলাম। তারপর দিনই আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। সেদিন আমাকে উনি নিরস্ত করেছিলেন।
এদিন বিধানসভা থেকে বেরনোর সময় রাজীবের হাতে ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ছবি, যা বিধানসভায় তাঁর ঘরে ছিল। তিনি বলেছেন, দলনেত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই... নেত্রী আমার কাছে মাদার ফিগার... তাঁর ছবি আমার সঙ্গে থাকবে।
গাড়িতে চড়ে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান রাজীব। তখন তিনি সামনের আসনে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যাকসিটে।
কয়েকঘণ্টা পর সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেই তৃণমূলের প্রাথমিক সদস্যপদ ছেড়ে দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। লেখেন, তৃণমূলের সদস্যপদ-সহ সমস্ত পদ থেকে আমি এই মুহূর্তে ইস্তফা দিচ্ছি। আমাকে যে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ। এই দলের সদস্য হিসেবে কাটানো সময় আমার কাছে মূল্যবান হয়ে থাকবে।
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কটাক্ষ, রাজীব নাটক করছেন। মমতার ছবি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
রাজনৈতিক মহলে এখন একটাই প্রশ্ন, রবিবার অমিত শাহের সভাতেই কি তাহলে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন রাজীব?

শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, রাজীব অত্যন্ত দক্ষ ও শিক্ষিত। আমার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক। আশাবাদী যে বিজেপিতে যোগ দেবেন। অমিত শাহ যতবার আসবেন, ততবার তৃণমূল ভাঙবে।
ফের হেভিওয়েট পতন!অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূলের।যদিও, প্রকাশ্যে তাদের গলায় কটাক্ষের সুর।

তৃণমূল নেতা ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ঠাকুর বলেছেন যত মত, তত পথ। আমরা ঠাকুরের কথা শুনব? না কি কিছু মোটা গুজরাতির কথা। কিছু ধান্ধাবাজ এখন বলছে সম্মান পাচ্ছি না। আরে সম্মান এখন পাচ্ছেন না মনে হল? আগে কেন হয়নি?
এবার সবার নজর রবিবার ডুমুরজোলা স্টেডিয়ামে অমিত শাহর সভার দিকে।সেখানেই কি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন ইনিংস শুরু হবে?

গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে বেসুরো রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে একাধিক জায়াগায় হোর্ডিং পড়ে। কোথাও লেখা, ‘দাদার সাথি’, কোথাও আবার লেখা ‘দাদার পাশে আমরা’। আর এরপরেই তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে রাজনৈতিক মহলে। জল্পনা উস্কে গত শুক্রবার মন্ত্রিসভা থেকে সরে আসেন রাজীব। আর আজ ইস্তফা দিলেন বিধায়ক পদ থেকে। তারপর দলও ছাড়লেন।