সাক্ষাৎকারটি সুশান্ত দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে, তার অল্পদিন আগে মুক্তি পায় তাঁর সুপারহিট ছবি এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি। সুশান্ত বলেছিলেন, বলিউডের মত জায়গাতেও বন্ধুত্ব হওয়া অসম্ভব নয়, সময়, বিশ্বাস ও মানসিক নিরাপত্তা- এই তিনটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের জন্য, কোন ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি আছেন সেটা ততটা দরকারি নয় এ ক্ষেত্রে। স্থায়িত্বের কথা ভাবলে ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি বহিরাগত না ফিল্মি পরিবারে জন্মেছেন, তাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। একমাত্র একটা জিনিসই আপনাকে বাঁচাতে পারে, তা হল নিজের কাজ সত্যি ভালভাবে করা আর পেশাদারিত্ব বজায় রাখা। বলিউডে অনেক বহিরাগত আছেন, যাঁরা দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছেন, আবার যাঁদের গডফাদারের সমর্থন রয়েছে, তাঁরা বিশেষ কিছু করতে পারেননি।
তবে সুশান্ত মনে করতেন, স্বজনপোষণ অত্যন্ত বিপজ্জনক ব্যাপার। যদি দীর্ঘদিন ধরে এমন লোকজনকে আমরা সুযোগ দিতে থাকি, যাদের কোনও প্রতিভা নেই তবে আমরা ভারসাম্যহীন একটা সমীকরণ তৈরি করছি। এর ফলে গোটা ইন্ডাস্ট্রি ধসে যাবে কারণ দর্শকের কাছে দুর্দান্ত সব বিদেশি ছবি দেখার সুযোগ রয়েছে, দারুণ অভিনয় দেখার সুযোগ রয়েছে। চূড়ান্ত সঙ্কটজনক পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি এখানে কিন্তু দর্শকদের কাণ্ডজ্ঞান ও আমাদের প্রাসঙ্গিকতা- কোনওটাই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে গেলে কি একা হয়ে যেতে হয়? সুশান্ত বলেন, সাফল্য বা ব্যর্থতা অথবা এই দুয়ের মাঝামাঝি অবস্থান- একাকীত্ব কোথাও নেই। লোকে এই কথা বলে থাকে, কারণ তারা ভাবে, সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে যে পুরস্কারগুলো আসবে তা তাদের জীবন বদলে দেবে। কিন্তু এটা সত্যি নয়। সাফল্যের সঙ্গে যে আনন্দটুকু আসবে সেটাই আপনার পুরস্কার। বেঁচে থাকা তো সে জন্যই। এছাড়া যেটুকু স্বীকৃতি বা অর্থলাভের কথা হচ্ছে তা শুধু পিআর এজেন্সির জন্য আর আপনার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের জন্য। আপনার একাকীত্বের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। তবে নিজের প্রতিভার জোরে ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে গৃহীত হতে পারার মধ্যে একটা গর্ব আছে। এর খারাপ দিকটা হল, ছোটবেলায় আপনি ভাবেন, একদিন ধনী হবেন, বিখ্যাত হবেন, আর সেটাই সব কিছুর জবাব। কিন্তু যখন সত্যি সেটা ঘটে, তখন বুঝতে পারেন, আপনার ধারণা কতটা ভুল ছিল।
১৪ তারিখ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সুশান্ত। জীবন সম্পর্কে এত স্পষ্ট ধারণা থাকা সত্ত্বেও মনের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা হতাশা শেষ করে দিল তাঁকে।