কলকাতা: বিহারে কয়েকটি আসন দখলের পর এবার বাংলাকে টার্গেট করেছে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল মিম। পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া বিহারের আটটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। কিষাণগঞ্জ, পূর্ণিয়া, কাটিহার জেলার এই আটটি আসন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর বা মালদহের লাগোয়া। বিহারে এই আটটি আসনেই লড়েছে মিম। কংগ্রেস মহাজোটের থেকে চারটি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে তারা।
বাংলার মিম নেতাদের দাবি, এখানে তাঁরা মূলত চারটি জেলাকে টার্গেট করছেন। এই তালিকায় রয়েছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। মিমের বীরভূম জেলা সভাপতি মনসুর রহমান বলেন, বিহারে পাঁচটা আসনে জয়ের পর গতকাল হায়দরাবাদ থেকে ফোন আসে। বলা হয়েছে, বাংলার চারটে জেলাকে নজরে রাখতে হবে। এই চার জেলায় লড়াই করব। বীরভূমেও চারটি আসনে জিততে পারে দল।
এই চারটি জেলার মধ্যে উত্তর দিনাজপুর বিহার সীমানা ঘেঁষা। সংখ্যালঘু মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভাওয়াড়ি ফল অনুযায়ী উত্তর দিনাজপুরের ৯টি বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল ৫টিতে ও বিজেপিতে ৪টিতে এগিয়ে। অর্থাৎ‍ মিম সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসালে তৃণমূলের ক্ষতি হওয়ার জোরাল সম্ভাবনা। মিমের উত্তর দিনাজপুরের জেলা পর্যবেক্ষক মহম্মদ মুজাফ্ফর আনোয়ার বলেছেন, বর্তমানে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষ। সামনেই নির্বাচন। ওয়েসির কাছে চাইব আমাদের বেশিরভাগ আসনে যাতে প্রার্থী দিতে পারি।
মুর্শিদাবাদের জনসংখ্যার প্রায় ৬৬ শতাংশ মুসলিম। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভাওয়াড়ি ফল অনুযায়ী উত্তর দিনাজপুরের ২২টি বিধানসভার মধ্যে তৃণমূল ১৬টিতে, কংগ্রেস ৫টিতে ও বিজেপি ১টিতে এগিয়ে।
আর মিম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জেলাতেও প্রার্থী দেওয়ার তোড়জোড় করছে বলে জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদের জেলা পর্যবেক্ষক তারিক আজিজ। বলেছেন, বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের ১৮টিতে লড়াই করতে চায় মিম। ইন্টারনাল সার্ভেতে চিহ্নিত করে সাংগঠনিক কাজ শুরু হয়েছে। সবক’টা সম্ভাবনাময়। আশাবাদী।
সংখ্যালধু অধ্যুষিত আরও একটি জেলা মালদায় প্রায় ৫১ শতাংশ মুসলিম। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাওয়াড়ি ফল অনুযায়ী জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে ৬টিতে, কংগ্রেস ৪টিতে ও তৃণমূল ২টিতে। মালদা জেলার সবকটি আসনে প্রার্থী দিতে দল তৈরি বলে জানিয়েছেন জেলা আহ্বায়ক মোতিউর রহমান।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত উত্তর ২৪ পরগনায় প্রায় ২৬ শতাংশ মুসলিমের বাস। জেলার ৩৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল ২১টিতে ও বিজেপি ১২টিতে এগিয়ে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস। এই জেলায় তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য।জেলার ৩১টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই এগিয়ে তৃণমূল। আসন্ন বিধানসভা ভোটে এই দু’টি জেলাও মিমের নজরে।

আসন্ন বিধানসভা ভোটে কী ভূমিকা মিম পালন করতে চলেছে, সে ব্যাপারে অধ্যাপক তাজউদ্দিন আহমেদের অভিমত, বিজেপিকে সব জায়গায় সাহায্য করছে। ওরা কটা সিট জিতছে সেটা বড় নয়, ওদের কাছে বড় বিষয়, কটা সিট বিজেপিকে দিল। বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকায় কাজ করছে। তবে তৃণমূল সাংসদের অভিমত, মিমের প্রভাব মূলত উর্দুভাষী মুসলিমদের মধ্যে। বাংলায় তারা ছাপ ফেলতে পারবে না। শেষ অবধি ভোট কাটাকুটি হলে কী হবে, তার উত্তর সময়ই দেবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমীরকুমার দাসের মত, হিন্দুদের ভোট একদিকে হয়ে গেলে, তারপর যদি মিম ঢুকলে মেরুকরণ বাড়বে। মিম বিহারে ভাল ফল করেছে। অনেক ভোট কেটে নিয়েছে। অন্য দলকে সুবিধা করে দিয়েছে। ভোট কাটা বিহারে যতটা সহজ, বাংলায় ততটা নয়।