নয়াদিল্লি: ২০০১ সালে প্রথমবার কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। সেই থেকে সম্পর্ক। প্রায় দু’দশকের সেই সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার হাত ছাড়লেন রাজ-পরিবারের এই সদস্য। সূত্রের খবর, জ্যোতিরাদিত্যর বিজেপিতে যোগদান এখন সময়ের অপেক্ষা। রাজ পরিবারে জন্মানো জ্যোতিরাদিত্য হার্ভার্ড এবং স্ট্যানফোর্ডের মতো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। মর্গ্যান স্ট্যানলি, মেরিল লিঞ্চের মতো সংস্থায় চাকরি করেছেন। তারপর রাজনীতিতে এসে লোকসভার সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন।
এমন ঝাঁ চকচকে কেরিয়ারগ্রাফের মালিকের বিদ্রোহে মধ্যপ্রদেশে বেকায়দায় কংগ্রেস। যাঁকে নিয়ে দু’দিন ধরে উত্তাল দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশ। রাজনীতিতে জ্যোতিরাদিত্যর এন্ট্রিও ছিল এরকমই সাড়া জাগানো।
২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিমান দুর্ঘটনায় মাধবরাও সিন্ধিয়ার মৃত্যুর পর মধ্যপ্রদেশের গুনা লোকসভা আসনটি খালি হয়। ২০০২ সালের বাবার ছেড়ে যাওয়া আসনে উপনির্বাচনে লড়েন জ্যোতিরাদিত্য। বিজেপির দেশ রাজ সিং যাদবকে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ভোটে হারিয়ে সাংসদ হন তিনি। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে ফের গুনা থেকে জিতে আসেন জ্যোতিরাদিত্য।
২০০৭ সালে মনমোহন সিংহের মন্ত্রিসভায় তথ্যসম্প্রচার এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী করা হয় এই তরুণ নেতাকে। ২০০৯ সালে তৃতীয়বার লোকসভায় জিতে আসার পর তাঁকে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১২ সালে মন্ত্রিসভায় রদবদলের সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর পদ পান জ্যোতিরাদিত্য। ২০১৪ সালে প্রবল মোদি ঝড়ের মধ্যেও মধ্যপ্রদেশের গুনা তাঁকে ফেরায়নি।
রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, কংগ্রেসের এই তরুণ তুর্কি সংসদে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত সরব ছিলেন। তাঁর আসনও ছিল রাহুলের পাশে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে অবশ্য গুনায় গড় রক্ষা করতে ব্যর্থ হন জ্যোতিরাদিত্য। বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান রাজ পরিবারের এই সদস্য।
এবার কি বিজেপিতে যাবেন তিনি? অবশ্য বিজেপির সঙ্গে সিন্ধিয়া পরিবারের সম্পর্ক অনেক পুরনো। ১৯৬৭ সালে জ্যোতিরাদিত্যর ঠাকুমা যোগ দিয়েছিলেন জনসঙ্ঘে। জ্যোতিরাদিত্যর দুই পিসি যশোধরা রাজে এবং বসুন্ধরা রাজেও বিজেপির সদস্য। বসুন্ধরা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। যশোধরা মধ্যপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক। জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেস ছাড়ার পর খুশি তিনি। বলেছেন, জ্যোতিরাদিত্যের ঘর ওয়াপসি হল।
জ্যোতিরাদিত্যর বাবা, মাধবরাও সিন্ধিয়া ১৯৭১ সালে প্রথমবার লোকসভা ভোটে লড়েন জনসঙ্ঘের টিকিটে। কিন্তু, এরপর নানা ইস্যুতে মায়ের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি হয় তাঁর। শেষমেশ ১৯৮০ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। বাবার মৃত্যুর পর, কংগ্রেসে ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি করে নেন জ্যোতিরাদিত্যও। মঙ্গলবার বাবার জন্মদিনেই কংগ্রেসের হাত ছাড়লেন তিনি। যা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে কংগ্রেস।দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী কটাক্ষ করেন,
আমরা সম্মান করতাম। এখানে রাজা ছিলেন, ওখানে প্রজা হবেন! পাল্টা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বলেছেন, ওখানে থাকলে মহারাজা, এখানে থাকলেই মাফিয়া!
সূত্রের খবর, বিজেপির কাছে রাজ্যসভার সদস্যপদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব দাবি করেছেন জ্যোতিরাদিত্য। এতদিন সংসদে কংগ্রেসের হয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছেন। ভবিষ্যতে কি সেই সরকারের হয়েই গলা ফাটাতে দেখা যাবে তাঁকে? সেই উত্তর দেবে সময়।