নয়াদিল্লি: প্রথম দেশীয় গাড়ি তৈরির কৃতিত্ব যেমন তাঁর, তেমনই মধ্যবিত্তকে চারচাকার স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন তিনি। সেই স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেই নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ি ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। সবচেয়ে কম দামের গাড়ি হিসেবেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবেও। কিন্তু কেন ন্যানো গাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন রতন টাটা? এতদিনে খোলসা হল তাঁর কারণ। (Ratan Tata)


রতন টাটা কেন ন্যানো গাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন, তা খোলসা করলেন কর্পোরেট জনসংযোগ আধিকারিক নীরা রাদিয়া। একসময় টাটা গোষ্ঠীর জনসংযোগ বিভাগটি দেখতেন তিনি। রতন টাটার প্রয়াণে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন তিনি। সেখানেই ন্যানো তৈরির নেপথ্যে রতন টাটার কী ভাবনা ছিল, তা খোলসা করেন তিনি। (Nano Car)


নীরার বক্তব্য, "স্বপ্ন দেখতে রতন টাটা। অত্যন্ত দূরদর্শী ছিলেন। ভারত ছিল ওঁর গর্ব। দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবাসতেন উনি। বিশ্বায়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন উনি, যাতে উন্নত প্রযুক্তির আমদানি ঘটিয়ে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যায় দেশের মানুষকে।" একলাখি ন্যানো তৈরির নেপথ্য কারণ কী ছিল, তাও খোলসা করেন নীরা। তিনি বলেন, "উনি (রতন টাটা) সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন। দু'চাকায় চেপে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁদের যাতে বৃষ্টিতে ভিজতে না হয়, তার উপায় বের করতে চেয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে সেখানে শিল্পায়নের কথা ভেবেছিলেন, কর্মসংস্থান তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কলকাতা থেকে সিঙ্গুর গোটা রাস্তারও উন্নয়ন ঘটতে পারত। গুজরাতের সানন্দে কারখানা হয় পরে। আজ সানন্দ গুরুগ্রামে পরিণত হয়েছে।"  


ন্যানো কারখানা তৈরির জন্য পশ্চিমবঙ্গকেই কেন বেছে নেন রতন টাটা, তারও কারণ খোলসা করেছেন নীরা। তাঁর কথায়, "উনি যখন সিঙ্গুরের নাম ঘোষণা করলেন, আমিও অবাক হয়েছিলেন। আগে থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। এমনই ছিলেন উনি। সিঙ্গুর হবে না-ই বা কেন? উনি উন্নয়ন চেয়েছিলেন, রাজনীতি নয়। একলাখি গাড়ি পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হবে না-ই বা কেন? উনি রাজ্যে শিল্পায়ন ঘটাতে চেয়েছিলেন। অনেক কিছু হিসেব কষেই গাড়ির দাম একলাখি করে থাকবেন উনি।  সমালোচনা শুনতে হয়েছে বটে, কিন্তু স্বপ্ন দেখেছিলেন উনি, ভবিষ্যৎ ভেবেছিলেন, যা ওঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।"


নীরার দাবি, সিঙ্গুরে কারখানা গড়া নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু সেই সমস্যা ন্যানো বা রতন টাটাকে ঘিরে ছিল না। তাঁর বক্তব্য, "রাজনৈতিক লড়াই চলছিল। তদানীন্তন শাসকদলের নেতার কেন্দ্র ছিল সিঙ্গুর। আরও অনেক রাজ্যে গিয়েছিলাম আমরা। পঞ্জাব, কর্নাটক, আরও অনেক। পরে গুজরাতকে বেছে নেওয়া হয় কারণ ওখানে শিল্পের প্রসার ঘটছিল, কাজ সহজতর হয়।" ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটাগোষ্ঠীতে কাজ করেন নীরা। পরে সংস্থা ছেড়ে বেরিয়ে এলেও রতন টাটার সঙ্গে বন্ধুত্ব ভাঁটা পড়েনি বলে জানিয়েছেন তিনি।