তমলুক : দেহব্যবসায় রাজি না হওয়ায় মার খেয়ে বছর ছয়েক আগে শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছিলেন রুমাদেবী।


স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে জেলে পাঠিয়ে সাজার জন্য লড়াই করেছিলেন। এ বার একই অত্যাচার থেকে পুলিশের সাহায্য নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের কাপাসএড়্যায় শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করলেন ছোট জা-কেও। রুমাদেবীর কথায়, ‘‘আমি নিজে ভুক্তভোগী। জায়ের খবর পেয়ে আর কোনও কিছু ভাবিনি। পুলিশের কাছে যাই।’’

এ রাজ্যের বিভিন্ন জাতীয় সড়কের ধারের হোটেলে দেহব্যবসার রমরমা নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। হলদিয়া–মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কাপাসএড়্যা এলাকার হোটেলগুলিতেও যে ওই ব্যবসা চলে, সে কথা সামনে আসে চলতি বছরের গো়ড়ায়। দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে কনস্টেবল নবকুমার হাইত খুন হওয়ার পরে। কেননা, দুষ্কৃতীরা ডাকাতির উদ্দেশে তেমনই একটি হোটেলে আস্তানা গেড়েছিল। ঘটনার পরে কিছুদিন ধরপাকড় চলে। কিন্তু তার পরেও যে হোটেলে দেহব্যবসা বন্ধ হয়নি, সেই অভিযোগ আর একবার ফের সামনে এল। অভিযোগে নতুনত্ব এটাই, এখানে কয়েকটি হোটেলে প্রয়োজনে বাড়ি মেয়ে-বৌদেরও ওই ব্যবসায় নামানো হয়। মঙ্গলবার রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে যে বধূটিকে উদ্ধার করা হয়, তাঁর বিয়ে হয়েছিল বছর সাতেক আগে। তাঁর স্বামী রুমাদেবীর স্বামীর খুড়তুতো ভাই। রুমাদেবীর শ্বশুরেরা পাঁচ ভাই। তাদের চার জনেরই ওই এলাকায় হোটেল ব্যবসা রয়েছে। যার আড়ালে দেহব্যবসা চলে বলে অভিযোগ। উদ্ধার হওয়া বধূটির ছ’বছরের ছেলে ও তিন বছরের মেয়ে রয়েছে। অভিযোগ, হোটেলে গিয়ে দেহব্যবসায় রাজি না হওয়ায় তাঁকে ঘরে আটকে রেখে বাঁশ দিয়ে মারধর করছিল স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ওই রাতে মদ্যপ স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে কোনও মতে বাবাকে ফোন করেন বধূটি। তাঁর বাপেরবাড়ির কাছেই থাকেন রুমা। ২০১০ সালে তিনি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বধূর বাবা রুমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গাড়িতে তাঁরা সরাসরি মহিষাদল থানায় চলে যান।

রুমাদেবীর অভিযোগ, থানা প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি। এমনকী তাঁর অতীত নিয়েও কথা বলতে শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। রুমাদেবী দমেননি। তাঁর কাছে ছিল পুলিশ সুপারের ফোন নম্বর। সরাসরি সেখানেই তিনি ফোন করেন। তারপরই শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় রুমাদেবীর জা-কে। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানান, থানা অভিযোগ নিতে চায়নি এ কথা সত্য নয়। ওই বধূকে উদ্ধার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলবে। উদ্ধার হওয়া বধূটির বাবা বলেন, ‘‘আগেও মেয়ে অত্যাচারের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু এ দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। মেয়েকে নিয়ে আসতে পেরেছি। জানি না এর পরে কী হবে!’’ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রুমাদেবীও। তিনি বলেন, ‘‘দেওর ফোনে হুমকি দিচ্ছে।’’ পুলিশ অবশ্য দুই বধূকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে। অভিযুক্ত দেওর অবশ্য কোনও অভিযোগই মানেনি। তাঁর দাবি, ‘‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক কারণে কথা কাটাকাটি হয়। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমি কাউকে হুমকি দিইনি।’’

রুমাদেবী জানান, ১৫ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়। কয়েক বছর পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পারিবারিক হোটেলে গিয়ে খদ্দেরের মনোরঞ্জনের জন্য চাপ দিতে থাকে। প্রতিবাদ করায় জোটে মারধর। ২০১০ সালের নভেম্বরে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন বাপেরবাড়ির লোকজন। পুলিশ রুমার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করে। জেলা আদালত তিন জনের তিন বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। যদিও উচ্চ-আদালতের নির্দেশে তারা সকলেই এখন জামিনে মুক্ত। রুমা বেশ কিছুদিন সরকারি হোমে থাকার পর ছেলেকে নিয়ে ফিরে যান বাপেরবা়ড়িতে।

আর শ্বশুরবাড়ির ভরসায় না থেকে রুমা এখন বিউটিশিয়ান কোর্স করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই চালাচ্ছেন। ছোট জা-কেও সে পথেই আনতে চান তিনি।