নয়াদিল্লি: শর্তসাপেক্ষে মহিলা সংরক্ষণ বিলে সমর্থন বিরোধী জোট I.N.D.I.A-র। সংসদে বিরোধী জোটের বৈঠকে মহিলা সংরক্ষণ বিলে সমর্থনের সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, ২০২৪-এর ভোটেই মহিলা সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করতে হবে। সরকারের অন্য সব বিভাগের মতো, নয়া আইন কার্যকর হলে লোকসভা এবং বিধানসভাগুলিতে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের সংরক্ষণ দিতে হবে বলে দাবি তুুলছেন বিরোধীরা। (Women's Reservation Bill)


সংসদের বিশেষ অধিবেশনে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা জারি। অতীতে এই একই বিল সংসদে পেশ হলে, বিজেপি তার বিরোধিতা করে বলে অভিযোগ বিরোধী জোট I.N.D.I.A-র। এর পাল্টা বিজেপি-র দাবি, কংগ্রেসের আনা বিলটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেই প্রেক্ষাপটেই বুধবার লোকসভায় আলোচনা শুরু হলে বিরোধীরা সকলেই মোটামুটি বিলটিতে সমর্থন জানান। (I.N.D.I.A Alliance)


কিন্তু লোকসভা এবং বিধানসভাগুলিতে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মহিলারা কেন সংরক্ষণ পাবেন না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। জনগণনা এবং সীমানা পুনর্বিন্যাসের সঙ্গে কেন বিলটিকে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘোষণা করে কেন ২০২৯ পর্যন্ত সময় লাগছে তা কার্যকর করতে, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। 


দিল্লি সূত্রে খবর বিষয়টি নিয়ে I.N.D.I.A জোটের বৈঠকও হয়। এদিন সংসদে আলোচনার সূচনা করেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী। মহিলাদের সংরক্ষণ দেওয়াতে কংগ্রেসের সমর্থন রয়েছে বলে জানান তিনি। সনিয়া জানান, দেরি না করে, অবিলম্বে বিলটি কার্যকর হওয়া উচিত। একই সঙ্গে জাতিভিত্তিক জনগণনা করে, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ থাকাও প্রয়োজন।


ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে জানান, মহিলা সংরক্ষণ বিলে তাঁদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের জন্য় কেন সংরক্ষণ দাবি করা যাবে না, প্রশ্ন তোলেন তিনি। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা হোক বলে মন্তব্য করেন তিনি। 


আরও পড়ুন: Sonia Gandhi: 'আমার জীবনসঙ্গী রাজীব গাঁধী...', মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা সংসদে, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন সনিয়া


শিরোমণি অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কউর বাদল বিলটিকে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের আরও একটি 'জুমলা' বলে উল্লেখ করেন। তাঁর বক্তব্য, "৫৪৩ আসনের সংসদে মাত্র ৭৮ জন মহিলা, হাজার হাজার পুরুষের সঙ্গে লড়ে এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে সকলকে। মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আশা জাগলেও, ভূরি ভূরি মিথ্যা পড়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ভুল ভাঙল। জনগণনা এবং সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর বিলটি কার্যকর হবে বলে জানা গেল পরে। তাহলে বিল আনতে ন'বছর সময় লাগল কেন? মহিলারা কবে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ পাবেন, তার কোনও দিনক্ষণ জানা নেই কারও।"


তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, "মহিলাদের সংরক্ষণ কাজে করে দেখাতে হয়। সরকার এবং শাসকদলকে বলব, আমাদের সমানাধিকার দিন। এই বিলের চেয়ে বেশি মহিলা সাংসদ ইতিমধ্যেই রয়েছে তৃণমূলের। আপনাদেপ সরকার, আপনাদের দলকে আরও বেশি মহিলা জনপ্রতি রাখতে হবে। সংরক্ষণ ৩৩ শতাংশের বেশি করুন। আপনারা যখন গরুকে সুরক্ষা দিতে চেয়েছিলেন, আমি সমর্থন জানিয়েছিলাম। তখন গরুর সংখ্যা গোনার জন্য অপেক্ষা করেননি। মহিলারা কি গরুর চেয়েও অধম যে আপনারা কবে গোনা  শেষ করবেন, কবে রেখা টানবেন. ততদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের?"


সমাজবাদী পার্টির সাংসদ ডিম্পল যাদব জানান, রাজ্যসভাতেও মহিলাদের সংরক্ষণ দেওয়া হবে কিনা, জানতে চান তিনি। রাজ্যের বিধান পরিষদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে কিনা জানতে চান তিনি। ডিম্পল বলেন, "বিপ্লব ছাড়া বিবর্তন সম্ভব নয়। আমাদের দেশে বিবর্তন আনতে গেলে তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি এবং সংখ্যালঘু মহিলাদের সংরক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।" ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি বলেন, "বিল নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল, তখন কতজনের মতামত নেওয়া হয়, জানতে চাই আমি। গোপনে এই বিলটি তৈরি করা হয়।"


মহিলা সংরক্ষণ বিল কার্যকর করতে জনগণনা এবং সীমা পুনর্বিন্যাসের জন্য় কেন অপেক্ষা করতে হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শুধুমাত্র ভোটের ঝুলি ভরতেই এই বিলটিকে গাজর ঝোলানোর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। তাই মহিলাদের সংরক্ষণে সমর্থন থাকলেও, নিজেদের দাবি-দাওয়া থেকে সরতে নারাজ তাঁরা, যেগুলি হল, ২০২৯ পর্যন্ত অপেক্ষা নয়, এখন বিল পাস করালে, অবিলম্বেই তা কার্যকর করতে হবে। তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের সংরক্ষণ দিতে হবে, যেমনটি শিক্ষা থেকে কর্ম, সবক্ষেত্রে কার্যকর রয়েছে।


মহিলা সংরক্ষণ বিলটিকে 'মুসলিম মহিলা-বিরোধী' বলে উল্লেখ করেছেন AIMIM সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তাঁর মতে, মনোদি সরকার শুধু সবর্ণ মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে চায়। এই বিল অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি এবং মুসলিম মহিলা-বিরোধী বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৭ শতাংশ মহিলা মুসলিম। সংসদে তাঁদের উপস্থিতি ০.৭ শতাংশ। তাই অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো কেন তাঁদের সংরক্ষণ দেওয়া হবে না, প্রশ্ন তোলেন তিনি।