নয়াদিল্লি: শাসক এবং বিরোধীদের সমর্থনে লোকসভায় পাস হয়ে গেল মহিলা সংরক্ষণ আইন। তার পরও প্রশ্ন এড়াতে পারছে না কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস করিয়ে নিয়ে বিজেপি আসলে ভোটের ঝুলি ভরতে চাইছে, এই বিলটিকে আইনে পরিণত করে, এখনই তা কার্যকর করা নিয়ে তাদের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, এখনই যদি মহিলা সংরক্ষণ আইন চালু না করা যায় তাহলে এখনই কেন বিল পেশ করল মোদি সরকার? শুধুই কি লোকসভা ভোটে ফায়দা তুলতে? মহিলা ভোট ব্যাঙ্ককে কাছে টানতেই কি আবারও নতুন গিমিক এই বিল? (Women's Reservation Bill)
বুধবার বিল নিয়ে আলোচনা চলাকালীনই লোকভায় এ নিয়ে কেন্দ্রকে বেঁধেন বিরোধী সাংসদরা। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, "মহিলা সংরক্ষণ বিল সম্পূর্ণ ভাবে দু'টি অজানা তারিখের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখানে কি আরও বড় জুমলা রয়েছে? ২০২৪ ভুলে যান, ২০২৯ সালেও এই বিল কার্যকর করা সম্ভব নয়।" তৃণমূলের আর এক সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "নির্বাচনের ছ'মাস আগে কেন এই বিল? মানুষের কাছে কী প্রমাণ করতে চাইছেন? এটা কি গিমিক?"
বুধবার লোকসভায় পাস হয়ে গেলেও, প্রশ্ন উঠছে সংসদের উভয় কক্ষে বিল পাস হলেও, মহিলা সংরক্ষণ চালু হবে কবে থেকে? ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে কি আদৌ সম্ভব? না কি ২০২৯ সাল অর্থাৎ পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? লোকসভা এবং রাজ্য়সভায় কবে থেকে মহিলা সংরক্ষণ চালু হবে, তা নিয়ে মোদি সরকারের পেশ করা বিলে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু, বিলের বয়ান দেখার পর বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের মতে, মহিলা সংরক্ষণ বিল আইনে পরিণত হওয়ার আগে দেশের জনগণনা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। করতে হবে সীমানার পুনর্বিন্যাসও প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: Women's Reservation Bill : মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিপক্ষেও পড়ল ভোট !
২০১১ সালের পর দেশে জনগণনা হয়নি। ২০২১ সালে জনগণনার কথা থাকলেও কোভিডের কারণে তা পিছিয়ে যায়। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পর জনগণনা হতে পারে। তার পর হবে আসন পুনর্বিন্য়াস। ফলে ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে মহিলা সংরক্ষণের বিষয়টি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাতেই মোদি সরকারের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। মহুয়ার কথায়, "মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায় বলে ফের লোক দেখাতেই এই বিল। মহিলাদের নিয়ে যদি সত্যিই চিন্তা থাকে, তাহলে আজকের ভোটার লিস্টের উপর নির্ভর করে সংরক্ষণ বিল কার্যকর করুন এবং ২০২৪ সালেই ৩৩ শতাংশ মহিলাকে সংসদে পাঠান।"
এর আগে সংবিধান (১২৮ তম সংশোধন) বিলের খসড়ায় বলা ছিল, সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরই মহিলাদের সংরক্ষণ কার্যকর করা যাবে। তাতে রাজ্য বিধানসভাগুলির ৫০ শতাংশের সমর্থন প্রয়োজন। কারণ সীমানা পুনর্বিন্যাসের সঙ্গে জড়িয়ে রাজ্যের অধিকার। এই সীমানা পুনর্বিন্যাসের আগে জনগণনা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। সেই সব মিটিয়ে ২০৩৯ সালের আগে মহিলা সংরক্ষণ বিল চালু করা সম্ভব নয় বলে মত সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদবের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগেন্দ্র লেখেন, ‘সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ২০২৯ সালের মধ্যে মহিলা সংরক্ষণ বিল কার্যকর হবে। এই তথ্য বিভ্রান্তিকর। আসলে ২০৩৯ সাল পর্যন্ত মহিলা সংরক্ষণ কার্যকর করা সম্ভব নয়।বাস্তব পরিস্থিতি অনেকে অনুধাবন করতে পারছেন না। ৮২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ২০২৬ সালের পর প্রথম যে জনগণনা হবে, সেই সংখ্যা হাতে পাওয়ার আগে সীমানা পুনর্বিন্যাস করা যাবে না। সেই জনগণনাই ২০৩১-এর আগে সম্ভব নয়’।
শেষ বার ২০১১ সালে ভারতে জনগণনা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ১০ বছর অন্তত জনগণনা হয়। সেই নিরিখে ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল, যা হয়নি। যোগেন্দ্র জানিয়েছেন, ২০৩১ সালে পরবর্তী জনগণনা। এর পর সীমানা পুনর্বিন্যাস হবে, যার চূড়ান্ত রিপোর্ট পেতেই তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। এর আগের রিপোর্টটি পেতে সময় লেগেছিল পাঁচ বছর। জনসংখ্যার অনুপাতের নিরিখে সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে বিস্তর ঝামেলারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রিপোর্ট পেতে হয়ে যেতে পারে ২০৩৭। সেই অনুযায়ী মহিলা সংরক্ষণ বিল ২০৩৯ সালের আগে চালু করা সম্ভব নয় বলে মত যোগেন্দ্রর। তাই ২০২৪ সালের লোকসভআ নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই বিল পাস করানোয় এত তাড়াহুড়ো বলে একমত বিরোধীরা।