ঢাকা: বাংলাদেশে ফের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থনাস্থলে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা সামনে এল। এই ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দক্ষিণ খুলনার রূপসা উপজিলার শিয়ালি গ্রামে  সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনদের বাড়ি ও ছয়টি দোকানেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 


জানা গেছে, গত শনিবার এই ঘটনা ঘটে। এই হামলার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়।  এর পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একদল মহিলা পুণ্যার্থী শুক্রবার রাত নটায় গ্রামের একটি প্রার্থনাস্থলে থেকে শোভাযাত্রা করছিলেন। শোভাযাত্রা যখন স্থানীয় অন্য একটি সম্প্রদায়ের প্রার্থনা স্থল অতিক্রম করছিল, তখন সেখানকার ধর্মগুরু চিৎকার করে শোভাযাত্রা নিয়ে আপত্তি তোলেন। এরপরই পুণ্যার্থীদের সঙ্গে  ওই ধর্মগুরুর বচসা বেঁধে যায়। তখন একটা মিটমাট হয়। দুপক্ষই শনিবার পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। 


শনিবার রাতে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং কাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি। 


পুলিশ জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধে পৌনে ছয়টা নাগাদ প্রায় একশো হামলাকারী ওই গ্রামে পৌঁছয়। তাদের হাতে ছিল অস্ত্র। তারা ভাঙচুর শুরু করে। এই হিংসায় চারটি প্রার্থনাস্থল ও একটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একইসঙ্গে ছয়টি দোকানও ভাঙচুর করা হয়। 


স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শক্তিপদ বসু বলেন, শিয়ালি ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাঁদেরই তাড়া করে। ঘাটভোগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী গ্রামে পৌঁছন। তিনি বলেন যে, ওই গ্রামে এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। 


শক্তিপদ বসু জানিয়েছেন, প্রায় একশোর বেশি হামলাকারী কোদাল, কাস্তে নিয়ে হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। সেখানকার বাসিন্দা কয়েকজনের দোকানেও ভাঙচুর করা হয়। তাদের এই কাজে বাধা দিলে হামলাকারীরা তাঁদেরও মারধর ও নিগ্রহ করে। গ্রামবাসীরা সবাই জড়ো হওয়ার আগেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।ভাঙচুরের পাশাপাশি এক ব্যক্তির বাড়িতে লুঠপাঠও চালানো হয় বলে অভিযোগ। তাঁর বাড়ির প্রার্থনাস্থলেও ভাঙচুর করা হয়। 


উপজেলা নির্বাহী আধিকারিক রুবাইয়া তাসনিম বলেছেন, ঘটনার পরই শনিবার তিনি স্থানীয় দুই সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরা। তিনি বলেছেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছন এবং সংঘাতের নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। 


রূপসা থানার ওসি সর্দার মোশারফ হোসেন বলেছেন, ওই এলাকায় পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছেন। ওসি ও নির্বাহী আধিকারিক উভয়েই জানিয়েছেন যে, শুক্রবার সন্ধেয়     প্রার্থনার সময় শোভাযাত্রা গান বাজানোর অভিযোগ নিয়ে দুই পক্ষের বচসা বাঁধে। তাঁরা বলেছেন, পুরো ঘটনাই ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। 


নির্বাহী আধিকারিকের দাবি, ওই সংঘাতের নিষ্পত্তি ঘটনার দিনই হয়ে গিয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে হামলার কোনও যোগ নেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা এই ঘটনায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।