লন্ডন:  ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে চায় না তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু বয়স্করা বিশেষ আশাবাদী নন, তাঁদের ধারণা, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা মানে আর্থিকভাবে দুর্বল সদস্য দেশগুলির দায় নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করা। কোন মতের পাল্লা ভারী, তা বৃহস্পতিবারই জেনে যাবে গোটা বিশ্ব। তবে আপাতত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে এই গণভোটে, যার পোশাকি নাম ব্রিটেন এক্সিট, এক কথায় ব্রেক্সিট। ব্রিটিশ সরকার আগেই জানিয়েছে, গণভোটের রায় যেদিকেই যাক, তা মান্য করবে সরকার। অর্থাৎ যদি ব্রেক্সিটপন্থীরা ভোটে জেতেন, ব্রিটেনই হবে প্রথম দেশ যারা ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবে।


জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গণভোটে কী ফল হবে, তা বোঝা কার্যত অসম্ভব। যাঁরা ইইউ-এর ছাতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন, তাঁরা ৪৫ শতাংশ আর থাকতে চাইছেন ৪৪ শতাংশ। ৯ শতাংশের সিদ্ধান্ত নিয়ে দোটানা রয়েছে। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন চান, দেশ থাকুক ইইউ-তেই। যদিও তাঁর দল কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। বিরোধী লেবার পার্টি, এসএনপি-রাও চায় ইউনিয়নে থাকতে, কারণ তার ফলে ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্য দেশগুলিতে ব্রিটেনের ব্যবসা করা সহজ। একই কথা বলেছে ইইউ সদস্য ফ্রান্স ও জার্মানি। আইএমএফ ও শিল্পপতিরাও ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। কিন্তু ব্রেক্সিটপন্থী ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি চায়, ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে, কারণ, প্রতি বছর সদস্যপদের চাঁদা বাবদ ব্রিটেন বেশ কয়েকহাজার পাউন্ড দেয়, বিনিময়ে তেমন কিছু পায় না। বিশেষত ইইউ-এর দেউলিয়া দেশগুলির দায় ঘাড়ে চাপায় অর্থনীতি কাহিল হয়ে পড়ছে। সদস্য দেশগুলির মধ্যে অবাধ নাগরিক যাতায়াতের ফলে সন্ত্রাসের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ব্রেক্সিটপন্থীরা জয়লাভ করলে তার প্রভাব পড়বে ভারতীয় অর্থনীতিতেও। সে ক্ষেত্রে ভিসা নিয়ম কড়া হতে পারে। ব্রিটেনের ভারতীয় কোম্পানিগুলির মুনাফাও কমতে পারে। পাউন্ড ও ইউরোর লড়াইয়ে ডলারের চাহিদা বেড়ে যেতে পারে। ফলে ডলারের তুলনায় দাম কমতে পারে টাকার। শেয়ার বাজারে ধস নামার আশঙ্কা।

এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার জন্য ভোটের আগে শেষ মুহূর্তেও জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ডেভিড ক্যামেরন। তাঁর নিজের ভাগ্যও নির্ভর করছে এই ভোটের ফলের ওপর। কারণ, ব্রেক্সিট জিতলে তাঁর যে প্রধানমন্ত্রী পদ যাবে, তা একরকম নিশ্চিত।