বেজিং: পরনে উজ্জ্বল হলুদ জোব্বা। নেড়া মাথা। উচ্চতা ২ ফুট। নাম শিয়াং।

বেজিংয়ের বৌদ্ধ মন্দির লঙ্গকোয়ানে গেলেই দেখা মিলবে এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর। যে কোনও বৌদ্ধ পুরোহিতের মতোই অনায়াসে বলে যেতে পারে মন্ত্র। বৌদ্ধ ধর্ম ও জীবনযাপনের নানা রীতিনীতি সম্পর্কেও কথা চালিয়ে যেতে পারে শিয়াং।

কে এই শিয়াং? অনেকটা ‘লাফিং বুদ্ধের’ মতো দেখতে শিয়াং আসলে যন্ত্রমানব বা রোবট। তার বুকে আটকানো ছোট্ট টাচ স্ক্রিনে ফুটে উঠছে একের পর এক নির্দেশ। সেই নির্দেশ অনুযায়ী মন্ত্র বা বৌদ্ধধর্মের খুঁটিনাটি নিয়েও সাবলীল ভাবে বলে যাচ্ছে শিয়াং। শুধু তাই নয়, মৌখিক নির্দেশ অনুযায়ী নড়চড়া করতে সক্ষম এই ছোট্ট রোবটটি। চাকায় ভর করে প্রায় সাত রকম গতিতে চলাচলও করতে পারে।

লঙ্গকোয়ান মন্দিরের অ্যানিমেশন কেন্দ্রের ডিরেক্টর ও শিয়াংয়ের নির্মাতা শিয়াংফান জানাচ্ছেন, নতুন কিছু করার ভাবনা থেকেই শিয়াংয়ের জন্ম। তাঁর কথায়, বিজ্ঞানের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের কোনও বিরোধ নেই। বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই বৌদ্ধ ধর্মকে আধুনিক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো এই লঙ্গকোয়ান মন্দির থেকে এর আগেও কিছু কার্টুন অ্যানিমেশন, কমিক সঙ্কলন তৈরির কাজ করা হয়েছে।

একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ও চিনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে শিয়াং। গত অক্টোবর থেকেই শিয়াংকে দেখার ছাড়পত্র পেয়েছেন মন্দিরে আসা দর্শনার্থীরা। শিয়াংয়ের একটি নতুন মডেল তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন শিয়াংফান।

এই কয়েক দিনের মধ্যেই শিয়াংয়ের জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁয়েছে। ওয়েইবো নামে চিনের একটি মাইক্রো ব্লগিং সাইটে এখন শিয়াংয়ের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। অনেক ভক্তই এখন শিয়াংকে ঘরে নিয়ে যেতে চাইছেন। তবে শিয়াংফান জানিয়েছেন, কোনও রকম বাণিজ্যিক লাভের জন্য শিয়াংকে তৈরি করা হয়নি। বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ও প্রযুক্তির সংযোগ স্থাপন করতেই এই উদ্যোগ।