হিউস্টন:  টেক্সাসে নিখোঁজ হওয়া ভারতীয় শিশুকন্যা শেরিন ম্যাথিউজ মৃত্যুরহস্যে চাঞ্চল্যকর মোড়। অবশেষে শেরিনের পালক মা সিনি ম্যাথিউজকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শিনির বিরুদ্ধে চাইল্ড এনডেনজারমেন্ট এবং অ্যাবনডনমেন্টের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় রিচার্ডসন পুলিশের হাতে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও বেশ কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট এবং প্রমাণ হাতে এসে গেলে পালক মা এবং বাবার ওপর আরও কিছু বাড়তি চার্জ লাগু হবে, খবর পুলিশ সূত্রে।



এই ঘটনার তদন্তে থাকা রিচার্ডসন পুলিশের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে জানান হয়েছে, ৭ অক্টোবর শনিবার সকাল আটটায়, ওয়েসলি ম্যাথিউজ এসে তাঁদের কাছে শেরিন নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। সেদিন সকালেই চাইল্ড এনডেনজারমেন্টের অভিযোগে ওয়েসলিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে অবশ্য বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময় জামিনে মুক্তি পান ওয়েসলি। অথচ পুলিশের হাতে আসা নয়া তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, তার আগের দিন, অর্থাত্ ৬ অক্টোবর রাতে তাঁরা শেরিনকে বাড়িতে একা রেখে নৈশভোজে গিয়েছিলেন। সেসময় ওয়েসলি এবং সিনির সঙ্গে ছিলেন তাঁদের বড় মেয়ে। সিনি জেরায় জানিয়েছেন, শেরিন দুধ খেতে চাইছিল না, সেই কারণে তাকে বাড়িতে একলা রেখে তাঁরা তিনজন বেরিয়ে যান। যে রেস্তোরাঁয় সে রাতে তাঁরা গিয়েছিলেন, সেখানকার বিল, খাবার অর্ডারের নথি খতিয়ে দেখে পুলিশ নিশ্চিত সে রাতে ওয়েসলিরা সেখানে ছিলেন। এমনকি রেস্তোরাঁর কর্মীরাও তাঁদের বয়ানে জানিয়েছেন, সেদিন তিনজনই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর থেকেই প্রমাণিত শেরিন তাঁদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় যায়নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় ৬ অক্টোবর রাতেই মৃত্যু হয় শেরিনের। তাহলে ঠিক কখন মৃত্যু হয়, এবং কখন দেহটি বাইরে ফেলে আসা হয়, সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে পুলিশ এখনই কিছু জানাতে চাননি। হাতে আরও প্রমাণ আসলেই সব জানানো হবে, জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসার।



অথচ ওয়েসলি ৭ অক্টোবর সকাল আটটায় থানায় গিয়ে শেরিনকে দুধ না খাওয়ার জন্যে রাত তিনটেয় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া এবং তারপর নিখোঁজ হওয়ার গল্প ফাঁদেন। এরপর সেখানকার মানুষ এবং পুলিশ শেরিনকে খুঁজলেও, নিজেদের মেয়েকে খুঁজতে সামান্যতম সাহায্যে এগিয়ে আসেননি ওয়েলসি এবং সিনি। ঘটনার পনেরো দিন পর ২৪ অক্টোবর একটি কালভার্ট থেকে উদ্ধার হয় শেরিনের দেহ। তারপরের দিনই পুলিশ ওয়েসলিকে গ্রেফতার করে। তখন নিজের আগের বয়ান বদলে, ওয়েসলি দাবি করেন, মেয়ে দুধ খেতে চাইছিল না। তাকে জোর করে গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে দুখ খাওয়াতে গিয়ে গলায় আটকে যায়। তাঁর চোখের সামনেই কাশতে কাশতে মৃত্যু হয় শেরিনের। তিনি নিজে বাইরে গিয়ে ফেলে আসেন শিশুর দেহটি। পরে অবশ্য অন্য এক সূত্রে জানা যায়, শেরিনের দেহটি কালভার্টে রেখে আসতে, ওয়েসলি-সিনিকে সাহায্য করেছিলেন তাঁদের পরিবারের অপর এক সদস্য।



বিহারের অনাথ আশ্রম থেকে ২০১৬ সালে দত্তক নেওয়া হয়েছিল শেরনিকে। তার একবছরের মধ্যে তিন বছরের শিশুকন্যার এই মর্মান্তিক পরিণতিতে নড়েচড়ে বলে সারা দুনিয়া। এদিকে সেখানে নিয়োজিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে এই ঘটনার ওপর বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।