নয়াদিল্লি: সম্প্রতি তালিবান সদস্যর সাক্ষাৎকার নিয়ে বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে শিরোনামে এসেছিলেন আফগান মহিলা সাংবাদিক বেহেস্তা আরঘন্দ। তালিবানরা কাবুল দখল করার কয়েক দিন পর তিনিই প্রথম কোনও সাংবাদিক যিনি মহিলা হয়ে এক তালিবান সদস্যর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, নারী স্বাধীনতা নিয়ে  সোজাসাপ্টা প্রশ্নও করেছিলেন তিনি। সাহস দেখে স্তম্ভিত হয়েছিল গোটা বিশ্ব।


কিন্তু কেন পালিয়ে এলেন দেশ ছেড়ে? এবিপি নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বেহেস্তা বলেন তালিবানরা যেভাবে কাজ করতে বলেছিল সেভাবে তিনি কাজ করতে চান না। এছাড়া প্রাণের ভয়ও ছিল। তিনি বলেন বাকি সকলের মতো তিনিও তালিবানকে ভয় পান। বেহেস্তা যে সংস্থায় কাজ করতেন সেখানকার প্রায় সব সাংবাদিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। সেখানে মহিলা হিসেবে কাজ করা সে দেশে অসম্ভব বলেই পরিবারের সঙ্গে কাতার চলে গিয়েছেন বেহেস্তা।


তিনি সাফ জানান তালিবানরা তাঁকে তাঁদের নির্দেশ মেনে কাজ করার জন্য চাপ দেয়। চারিপাশের পরিবেশও এতটাই ভীতসন্ত্রস্ত ছিল যার জেরে বেহেস্তা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। বেহেস্তা আরঘন্দের কথায়, "তালিবানরা যা বলে তা মেনে চলি এই নির্দেশ নিজে মেনে নিলে তবে হয়ত দেশে ফিরতে পারব। যা অসম্ভব।" 


বেহেস্তা বলেন তালিবানরা মিডিয়ায় বা প্রশাসনে নারীদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী নয়। মহিলাদের অধিকার ও শিক্ষা প্রসারণেও রাশ টেনেছে তালিবান। প্রসঙ্গত, সাক্ষাৎকারে তালিবান নেতাকে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা মহিলাদের অধিকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা অধিকার চাই, কাজ করতে চাই।’ বেহেস্তা বুঝতে পারেন, দেশে থাকা তাঁর জন্য নিরাপদ নয়।


গতকালই অ্যাঙ্করকে গান পয়েন্টে রেখে পড়ানো হল সংবাদ ! তালিবানরা যা বলছে, ঠিক তাই আউড়াতে হল উপস্থাপককে।  আফগানিস্তানের একটি নিউজ চ্যানেলে ৭ জন সশস্ত্র তালিবান ঢুকে পড়ে। এরপর সোজা স্টুডিওয়। সেখানে চলছিল সংবাদপাঠ। পাঠকের ঠিক পিছনে চলে যায় বন্দুকধারীরা। বন্দুকের নল তাক করা হয় তাঁর দিকে। তারপর তিনি কী খবর পড়বেন, কী প্রশ্ন করবেন, তা পাশে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 


তালিবানের নতুন ফতোয়া, রেডিও ও টিভিতে মহিলা কণ্ঠস্বর সম্প্রচার করা যাবে না! কান্দাহারে রেডিও ও টিভিতে বিনোদনমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠানও নিষিদ্ধ করেছে তালিবান! ক্ষমতা দখলের পরই তালিবান নির্দেশ দিয়েছে, হিজাব ছাড়া মহিলারা রাস্তায় বেরোতে পারবে না।


ক্ষমতা দখলের পরেই আফগানিস্তানে সরকারি টেলিভিশনে মহিলা অ্যাঙ্করকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় আনা হয় পুরুষ সঞ্চালককে। তালিবান-শাসনে মহিলারা কাজ করতে পারবেন, আফগানিস্তান দখলের পর আশ্বাস দিয়েছিলেন তালিবান মুখপাত্র জয়বুল্লা মুজাহিদ। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো ছবি। যত দিন যাচ্ছে, মহিলাদের উপর ততই নৃশংস হয়ে উঠছে তালিবান।