আর সেই নির্জন জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাস! পরিত্যক্ত। কিন্তু সেই যানের অমোঘ আকর্ষণ। এতটাই যে, সেই বাসের কাছে ছুটে যেতেন অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীরা। অনেকেই সেটা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন। একের পর এক দুর্ঘটনার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন এতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে যে, এবার হেলিকপ্টারে করে সেই বাসটিকেই সরিয়ে ফেলা হল জঙ্গল থেকে!
কয়েক দশক ধরে আলাস্কার ‘স্ট্যাম্পেড ট্রেইল’ –এ পড়েছিল বাসটি। সেটিকে নিয়ে জনমানসে নানা কৌতুহল রয়েছে। বাসটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন অনেকে। কিন্তু পৌঁছতে পারেননি। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। ফলে বাসটিই সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। তবে স্থলপথে নয়। হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওই বাস। আলাস্কা আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের সিএইচ-৪৭ চিনুক হেলিকপ্টারে করে।
বাসটি ‘ম্যাজিক বাস’ নামেও পরিচিত ছিল। ১৯৯৬ সালে জন ক্রাকুউয়ার তাঁর একটি বই ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’-এ এই বাসের কথা উল্লেখ করেন। ২০০৭ সালে এ নিয়ে একটি ছবি বানানো হয়। নাম দেওয়া হয় ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’। বইতে ক্রিস্টোফার ম্যাক্যান্ডলেসের জীবন তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বড় হয়েছেন ওয়াশিংটনে। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে ১৯৯২ সালে তিনি পৌঁছে যান আলাস্কায়। বইয়ে বলা হয়েছে, সেখানে ‘স্ট্যাম্পেড ট্রেইল’-এর মাথায় তাঁকে নামিয়ে দেন এক ব্যক্তি। এর কয়েক দিন পরে, ম্যাক্যান্ডলেস হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যান ওই পরিত্যক্ত বাসের কাছে। তার ভিতর ছিলেন প্রায় তিন মাস। এরপর সভ্য জগতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু খরস্রোতা তেকলানিকা নদী পার হতে না পেরে ফিরে যান বাসে। সেখানে আরও প্রায় এক মাস ছিলেন। ১৯৯২ সালের অগাস্টে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পর্বত আরোহী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে ওই বাসটি হয়ে ওঠে প্রবল আকর্ষণীয়। ম্যাক্যান্ডলেসের পায়ের ছাপ শনাক্ত করার জন্য অনেকে সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এবং ঘন জঙ্গলে আটকে পড়েন। অনেকে মারাও গিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে স্ট্যাম্পেড ট্রেইল থেকে ইতালির ৫ নাগরিককে উদ্ধার করা হয়। তাঁরা পরিত্যক্ত ওই বাসটি দেখে ফিরছিলেন। তারও আগে বেলারুশের এক যুবতী তাঁর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসটি পরিদর্শনে যান। কিন্তু তেকলানিকা নদী অতিক্রম করতে গিয়ে তাঁরা মারা যান। এরপরেই বাসটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।