লন্ডন: দেশের চার কোটি মানুষকে বিপদে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু আফগানিস্তানের (Afghanistan) প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির (Ashraf Ghani) দাবি, আগুপিছু ভাবার সময়ই পাননি তিনি। তালিবান (Taliban) প্রেসিডেন্ট প্যালেসে ঢুকে পড়তে শুরু করলে মাত্র দু’মিনিট সময় পেয়েছিলেন তিনি। এমনকি বিমানে পা রাখার সময়ও বুঝতে পারেননি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।


তালিবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকেই দেশছাড়া গনি। তার পর নেটমাধ্যমে কয়েক বার বার্তা দেওয়া ছাড়া সে ভাবে তাঁকে দেখা যায়নি। সম্প্রতি বিবিসি রেডিয়ো ফোর-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তান এবং তালিবান নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। গনি বলেন, “১৫ অগাস্ট তালিবান কাবুল দখল করে। আফগানিস্তানে সেটাই যে শেষ দিন, তা বুঝতে পারেননি তিনি।”


তালিবানের হাতে দেশের মানুষকে ছেড়ে দিয়ে পলায়নের জন্য এ যাবৎ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে গনিকে। সে নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে গনি বলেন, “ওই দিন বিকেলের মধ্যেই প্রাসাদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়ে। আমি ওই সময় রুখে দাঁড়াতে গেলে, সকলকে মেরে দিত ওরা। ওই সময় আমাকেও রক্ষা করার মতো অবস্থায় ছিল না সেনা।”


গনি জানিয়েছেন, তালিবান কাবুলে ঢুকে পড়েছে জেনেই প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামদুল্লা মোহিব। তিনিই তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। গনি বলেন, “আমাকে দু’মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে ঠিক হয়, হেলিকপ্টার নিয়ে দক্ষিণ-পূর্বের খোস্ত শহরে পৌঁছনোর। কিন্তু খোস্ত তত ক্ষণে ইসলামি জঙ্গিদের দখলে চলে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাহিনীও সেখান থেকে সরে গিয়েছিলয পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন জালালাবাদও দখল হয়ে গিয়েছে। কোথায় যাব জানতাম না। বিমানে পা রাখার পর বুঝতে পারলাম, দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।”


আরও পড়ুন: Happy New Year 2022: বিশ্বজুড়ে ওমিক্রন ত্রাস, কীভাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান?


আফগানিস্তান ছাড়ার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই রয়েছেন গনি। কিন্তু তালিবানের হাতে সকলকে ফেলে রেখে চলে যাওয়ায়, তাঁর উপর ক্ষুব্ধ দেশের মানুষ। বিশ্বব্যাঙ্কের আধিকারিকরাও প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেছেন। গনি আফগানবাসীকে কৈফেয়ত দিতে বাধ্য বলে মত তাঁদের। কোটি কোটি টাকা বিমানে ভরে নিয়ে গনি পালিয়েছেন, এমন অভিযোগও সামনে এসেছিল। গনি যদিও তা অস্বীকার করেছেন।


গনির দাবি, গোটা দেশ থেকে মানুষ পালিয়ে এসে কাবুলে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁর আশঙ্কা ছিল, কাবুলের রাস্তায় না নৃশংস হত্যাকাণ্ড শুরু হয়ে যায়। দেশে ছেড়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত, তাঁর জীবনর কঠিনতম সিদ্ধান্ত বলেও জানিয়েছেন গনি। তাঁর কথায়, “কাবুলকে বাঁচাতেই নিজের সঙ্গে আপস করতে হয়েছিল আমাকে। সকলকে জানাতে চেয়েছিলাম, রাজনৈতিক সমঝোতা নয়, হিংসা এবং নৃশংসতার মাধ্যমে কাবুল দখল করা হয়েছে।”


সেই সঙ্গে গনি আরও জানিয়েছেন, তিনি থেকে গেলেও আফগানিস্তানের পরিস্থিতি বদলাতো না। আমেরিকা (US) হাত তুলে নেওয়াতেই যে নতুন করে তালিবান শাসন কায়েম হয়েছে, তাও তুলে ধরেন গনি। তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যক্রমে, আমাকে খলনায়ক বানানো হয়েছে। কিন্তু গোটাটাই আমেরিকার সমস্যা। আমার সারাজীবনের পরিশ্রম ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। বলির পাঁঠা করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আমার সমস্ত আদর্শ।” আফগানবাসীর উপর তাঁর কোনও রাগ নেই বলেও জানিয়েছেন গনি। তাঁর কথায়, “আমাকে দোষ দেবেন না তো, কাকে দোষ দেবেন ওঁরা! ওঁদের ক্ষোভের কারণ বুঝি আমি। আমি নিজেও একই কারণে ক্ষুব্ধ।”


এর আগেও আফগানিস্তানের পরিস্থিতির জন্য আমেরিকার দিকে আঙুল তুলেছিলেন গনি এবং তাঁর সরকারের শীর্ষ আধিকারিকরা। তাঁরা দাবি করেন, নিজেরা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অক্ষম বলে, সকলকে অন্ধকারে রেখেই আমেরিকা তালিবানের সঙ্গে সমঝোতা চালাচ্ছিল। একের পর এক রাজ্য তালিবানের হাতে চলে গেলেও, আমেরিকা আশ্বাস দিয়েছিল, কাবুল দখল হবে না। কিন্তু তা হয়নি। বরং তালিবানকে রোখার কোনও চেষ্টাই করেনি আমেরিকার সেনা।