নয়াদিল্লি: যোগ দিবস পালন নিয়ে ভারতে রাজনৈতিক বিতর্ক কম হয়নি। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে এক মুসলিম ব্যক্তি একাই ২০ হাজার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যোগাসন করেছেন। শুধু এই একটা দিনই নয়, প্রতিদিন অন্তত হাজার দশেক মানুষকে যোগাসন শেখান শামসাদ হায়দার। তিনি এখন ‘যোগী হায়দার’ নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছেন। পাকিস্তান সরকার তাঁকে যোগাসন শেখানো এবং প্রচারের অনুমতি দিয়েছে।


 

রাষ্ট্রসংঘ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহা সমারোহে যোগ দিবস পালিত হয়েছে। কিন্তু হায়দার কোনও প্রচার পাননি। তিনি প্রচারের আশাও করেন না। নীরবে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন। এই যোগী বলছেন, পাকিস্তানের মতো দেশে ঢাকঢোল না পিটিয়ে যোগাসন করাই ভাল।

 

পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে জন্ম হায়দারের। তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলিম। একইসঙ্গে যোগাসনও ভালবাসেন। অনেকে যোগাসনকে হিন্দু ধর্মের অঙ্গ বলে মনে করলেও, হায়দার করেন না। তাঁর মতে, সব ধর্মের মানুষেরই যোগাসন করা উচিত। মুসলিমদেরও প্রতিদিন সকালে নমাজ পড়ার পর অন্তত পাঁচ মিনিট ধ্যান করা উচিত। এতে তাঁদের শরীর-মন শান্ত থাকবে। তাছাড়া যোগাসন সংযমী হতে শেখায়, যা সব ধর্মেই গুরুত্বপূর্ণ।

 

সৌদি আরবে বেশ কিছুদিন ছিলেন হায়দার। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসকরা অ্যাপেনডিক্স অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু হায়দার অস্ত্রোপচার না করে সোমালিয়ার এক চিকিৎসকের লেখা মনোবিজ্ঞানের বই পড়া শুরু করেন। তারপরেই হায়দারের জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে। তিনি চিন, তিব্বত, ভারত, নেপালে গিয়ে প্রাচীন বিজ্ঞান শেখেন।

 

হায়দারের যোগগুরু এসএন গোয়েঙ্কা। তাঁর কাছেই যোগাসন শেখেন হায়দার। সেটা আবার ভারতে। এরপর তিনি দেশে ফিরে যোগাসনের প্রচার শুরু করেন। পাকিস্তানে বেশ কয়েকজন ধর্মগুরুও তাঁর কাছে যোগাসন শেখেন। তাঁরা আবার অন্যদের যোগাসন শিখতে বলেন। সব ধর্মের মানুষই হায়দারের কাছে যোগাসন শিখতে আসেন।

 

ভারতে যোগাসন নিয়ে ধর্মীয় বিতর্ক হয়। পাকিস্তানেও হায়দারকে মাঝেমধ্যেই সমস্যায় পড়তে হয়। তবে তাতে তিনি থেমে নেই। বলছেন, ভাল জিনিসও খারাপ মানুষের হাতে পড়লে খারাপ হয়ে যায়। যোগাসন মানবিকতার শিক্ষা দেয়। এটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। যোগাসন ভারত বা হিন্দু কারও একার নয়।

 

সম্প্রতি বিয়ে করেছেন হায়দার। তাঁর স্ত্রী সুমালিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কোনও চিকিৎসাতেই রোগ সারছিল না। তখনই তিনি যোগাসন শিখতে আসেন। হায়দার তাঁর রোগ সারিয়ে দেন। এরপরেই তাঁরা বিয়ে করেন। এখন সুমালিয়া মহিলাদের যোগাসন শেখান।

 

ইসলামাবাদ, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি সহ গোটা পাকিস্তানে ৫০টি যোগাসন শিবির খুলেছেন হায়দার। তাঁর লক্ষ্য পাকিস্তানের সব স্কুলে, সব ধর্মের মানুষকে যোগাসন শেখানো।