ঢাকা: বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াই শুধু নয়, পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমে। অর্থাৎ, গোঁড়া মাদ্রাসা শিক্ষা কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি এদের। তা সত্ত্বেও, ঝরঝরে ইংরেজিতে কথা বলা, বড় ঘরের তথাকথিত আলোকপ্রাপ্ত এই সব ছেলেমেয়েরা কী করে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে ইসলামি জঙ্গিবাদের অন্ধকার জগতে? এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের। বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রাক্তন মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ জানিয়েছেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ইসলামি জঙ্গিদের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হতে হবে। কর্তৃপক্ষের অবহেলার জন্যই কট্টরবাদ এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ডালপালা ছড়াতে পেরেছে বলে মনে করছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩৩জন পড়ুয়ার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে সক্রিয় যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ক্যাম্পাস থেকেই চলছে জঙ্গি কার্যকলাপ। বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী নিষিদ্ধ ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী ‘হিজবুত তাহরির’-এর সক্রিয় সদস্য। এদের মধ্যে ১১জনই অভিজাত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাকিদের ৬জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ৩জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ২জন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। একজন আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নাম মহিউদ্দিন আহমেদ। ‘হিজবুত তাহরির’ জঙ্গি গোষ্ঠীর রিং লিডার হিসেবে একে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যোগসাজসের প্রমাণ মেলায় এর চাকরি যায়। তারপরেই প্রকাশ্যে আসে আর একটি তথ্য। পরীক্ষায় ভাল নম্বরের টোপ দিয়ে শিক্ষকরা পড়ুয়াদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যোগ দিতে চাপ দিচ্ছেন। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তলে তলে চলছে এ সব কাজকর্ম। এর আগে ২০১৫-তেও দারুল বিশ্ববিদ্যালয় ও আর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ পড়ুয়াকে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগে আটক করে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ঢিলেঢালা আচরণও সাহস জোগাচ্ছে জঙ্গিদের। লাইব্রেরি থেকে জঙ্গি কার্যকলাপ সংক্রান্ত কাগজপত্র মেলার পরেও এ সব রুখতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

২০১৩-র ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় ২ ছাত্রকে। অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকি খুনে গ্রেফতার হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ পড়ুয়া। অর্থাৎ, জঙ্গি কার্যকলাপ আর শুধু লিফলেটেই সীমাবদ্ধ নেই, তা চপার হাতে খুনিও করে তুলছে সদ্য যুবকদের।