কলকাতা: অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা সাবধান! আপনার ফোনে হয়ত ঘাপ্টি মেরে বসে আছে ভয়ঙ্কর ম্যালওয়্যার। নাম ‘গডলেস’। জানা গিয়েছে, এই ম্যালওয়্যারটি ভারতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।


ম্যালওয়্যার কী?

ম্যালওয়্যার-এর পুরো নাম ম্যালিসিয়াস  সফটওয়্যার। এটি একটি বৃহত্তর সংজ্ঞা। যে কোনও সফটওয়্যার যা ক্ষতিকারক, তাই ম্যালওয়্যার। এর আওতায় যেমন থাকতে পারে কম্পিউটার ভাইরাস। তেমনই থাকতে পারে ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স, রানসমওয়্যার, স্পাইওয়্যার, অ্যাডওয়্যার, স্কেয়ারওয়্যার এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম। এটি কখনও একজিকিউটেবল কোড (.exe), স্ক্রিপ্ট, অ্যাক্টিভ কন্টেন্ট এবং অন্যান্য সফটওয়্যারের আকারে দেখা দিতে পারে।

মোবাইল নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংস্থা ‘ট্রেন্ড মাইক্রো’ নিজেদের সাম্প্রতিকতম ব্লগে এই ম্যালওয়্যার নিয়ে ব্যবহারকারী এবং ফোন সংস্থাগুলিকে সতর্ক করেছে। ‘গডলেস’ নিয়ে ওই ব্লগে তারা লিখেছে, অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমের নিরাপত্তায় একটি বড় বিপদ সামনে এসেছে। আশঙ্কা, অ্যান্ড্রয়েড ললিপপ ও তার আগের ভার্সান যে ফোনে রয়েছে, মূলত সেখানেই হানা দিচ্ছে ‘গডলেস’।

অর্থাৎ, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোনই এই ম্যালওয়্যারের শিকার হতে পারে। আরও উদ্বেগের খবর হল, ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ ফোনে থাবা বসিয়েছে এই মারাত্মক ম্যালওয়্যার, যার অর্ধেকের বেশি ভারতেই। ‘ট্রেন্ড মাইক্রো’ জানিয়েছে, ভারতে এই ম্যালওয়্যার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।



কেমন করে কাজ করে গডলেস ম্যালওয়্যার?

নিরাপত্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘গডলেস’ ম্যালওয়্যারটি অত্যন্ত চালাক। অ্যাপের (অ্যাপলিকেশন) মধ্যে লুকিয়ে থাকে সেটি। টেরও পাওয়া যায় না। ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করার সঙ্গে সেটিও ফোনে ঢুকে পড়ে। তারপর থকেই খোলস ছেড়ে আসল রূপে চলে আসে গডলেস। প্রথমে সেটি অ্যান্ড্রয়েড রুটিং টুলস-কে ব্যবহার করে স্মার্টফোনে নিজের প্রভাব বিস্তার শুরু করে।

একবার পুরোপুরি ঘাঁটি গড়ার পর শুরু হয় আসল খেলা। আপনার ফোনের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় গডলেস-এর হাতে। তারপর সেটি আপনার ফোন নিয়ে যা খুশি করতে পারে। যেমন, আপনি জানতেও পারবেন না, অথচ বিভিন্ন অ্যাপ আপনার ফোনে ডাউনলোড হয়ে যাবে। আবার, ব্যবহারকারীর ফোনে অপ্রয়োজনীয় স্প্যাম অ্যাপ চলে আসে। অহেতুক বিজ্ঞাপন বারবার ভেসে ওঠে ফোনে।

এখানেই শেষ নয়। আরও বড় আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে ‘ট্রেন্ড মাইক্রো’। তারা জানিয়েছে, এই ম্যালওয়্যারটি আপনার ওপর-ও নজরদারি চালাতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এমন প্রমাণও মিলেছে। ‘গডলেস’ এতটাই চালাক যে, এই ম্যালওয়্যারটির সাম্প্রতিকতম ভার্সান গুগল প্লে-র মতো অ্যাপ স্টোরের অত্যাধুনিক এবং উচ্চ নিরাপত্তা সিস্টেমকেও বাইপাস করতে সক্ষম। ‘গডলেস’ অ্যান্ড্রয়েডের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আরও একটি কারণে। তা হল, একবার ফোনে ঢোকার পর এটিকে আন-ইনস্টল বা ফোন থেকে সরিয়ে দেওয়া অত্যন্ত দুষ্কর।

গডলেস-কে আটকাতে কী করণীয়?

যে কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে ভাল করে তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক বা ওই অ্যাপ সম্পর্কে বা তার নির্মাণকারী সংস্থার সম্পর্কে ভাল করে জেনে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, নতুন ডেভেলপারদের হাত ধরেই অধিকাংশ সময়ে ম্যালওয়্যারগুলি প্রবেশ করে। অনেক সময় এটা করাটা শ্রমদায়ক এবং বিরক্তিকর হতে পারে। তবে, সাবধানের মার নেই।

পাশাপাশি, সকল অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যে ট্রেন্ড মাইক্রো-র পরামর্শ, বিশ্বস্ত অ্যাপ স্টোর যেমন গুগল প্লে স্টোর বা অ্যামাজন থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা উচিত। একইসঙ্গে, ফোনের নিজস্ব সিকিউরিটি ব্যবস্থাকে চালু রাখা, যাতে এধরনের ম্যালওয়্যার প্রবেশ না করতে পারে।

অনেক সময়, অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার ইনস্টল করলে কাজ হয়। কিন্তু, ফোন সামান্য স্লো হয়ে পড়ে এবং ফোনের মেমরি কিছুটা খরচ হয়, সেই কারণে অধিকাংশ ব্যবহারকারী এগুলি ফোনে রাখেন না। তবে, এখন ভাবনায় বদল আনার সময় হয়েছে...।