বেইরুট: গত পাঁচ বছর ধরে সন্ত্রাসে ছিন্নভিন্ন সিরিয়ায় রক্তাক্ত শৈশবের মুখ হয়ে ওঠা ৪ বছরের ছোট্ট ওমরানের ছবি দেখে সম্প্রতি শিউরে উঠেছে গোটা দুনিয়া। এবার দাদাকে হারাল সে।


গত বুধবার বিদ্রোহীদের দখল করে রাখা পূর্ব আলেপ্পির কাতেরজি এলাকায় বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে যায় ওমরানদের অ্যাপার্টমেন্ট। ওর ভাই-বোন, বাবা-মা সহ গোটা পরিবারকে ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ইট, বালি, সিমেন্টের চাঙর সরিয়ে টেনে বের করা ওমরানের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। হাত-পা, মাথায়, মুখে ধুলোবালির সঙ্গে লেগে রয়েছে রক্ত। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আকস্মিক হামলায় হতবাক বাচ্চা ছেলেটা ওপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রক্তমাখা কপালে হাত দিচ্ছে। তারপর নিজের হাতের দিকে তাকাচ্ছে। কমলা রঙের চেয়ারের আসনে হাত মুছে নিচ্ছে। সেই হামলায় ওমরানের মতোই মারাত্মক জখম হওয়া তার দাদা আলি মারা গিয়েছে। এক বিবৃতিতে সিরিয়ার মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত কমিটি জানিয়েছে, বোমার আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে ১০ বছরের আলির। ১৭ আগস্ট আলেপ্পোয় ওমরানের মতোই জখম হয় সে। আলির মৃত্যু সংবাদের সত্যতা স্বীকার করেছে আলেপ্পো মিডিয়া সেন্টারও।

ওমরানই প্রথম নয় যার ছবি গোটা দুনিয়াকে চমকে দিয়ে সিরিয়ার আক্রান্ত, বিপন্ন শৈশবের চেহারা হয়ে উঠে এল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিন বছরের আয়লান কুর্দির ছবি দেখেও চোখে জল এসে গিয়েছিল বিশ্ববাসীর। পালিয়ে ইউরোপে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে নৌকো ডুবে মারা যায় আয়লান। তার নিথর দেহটি ভেসে এসেছিল তুরস্কের এক সমুদ্রতটে।

সিরিয়ার চলতি সংঘাত পর্বে ২ লক্ষ ৯০ হাজারের বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ১৫ হাজার শিশু।

অশান্ত হয়ে ওঠা ওমরানের নিজের শহর আলেপ্পোর পশ্চিম অংশটি ২০১২ সাল থেকে রয়েছে সরকারের দখলে। পূর্ব প্রান্তে আবার নিয়্ন্ত্রণ বিদ্রোহী যোদ্ধাদের। ২০১৫ থেকে রুশ বিমানবাহিনীর সহায়তায় পূর্ব প্রান্তের শহরগুলিতে বোমা ফেলে চলেছে সরকারি যুদ্ধবিমান। পাল্টা পশ্চিমের ওপর রকেট হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহীরা। পূর্ব প্রান্তে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ। তাদের এক লক্ষই শিশু, জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শিশুরক্ষা সংক্রান্ত সংস্থা ইউনিসেফ।