বেজিং: ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম দেখানোর পরামর্শ দিল চিন। সোমবার ভারতের সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করতে, জম্মু ও কাশ্মীরকে দ্বিখন্ডিত করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে বিল পেশ হয়েছে। তা রাজ্যসভায় পাশও হয়েছে। এ নিয়ে ভারতে শোরগোলের মধ্যেই চিন বলল, ভারত ও পাকিস্তানের এমন পদক্ষেপ এড়িয়ে চলাই উচিত যা একতরফা স্থিতাবস্থা বদলে দেবে, তাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি লাদাখে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সৃষ্টির ভারতের সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেছে তারা। ওই অঞ্চলের ওপর নিজেদের দাবি বহাল রেখেছে চিন।
বেজিংয়ে চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনিং দাবি করেন, কাশ্মীর প্রশ্নে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার, ধারাবাহিক, সঙ্গত। বলেন, ইস্যুটি ভারত ও পাকিস্তানের ইতিহাসের ঐতিহ্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ নিয়ে সহমত।


তিনি আরও বলেন, চিন সবসময় চিন-ভারত সীমানার পশ্চিমী এলাকার চিনা ভূখন্ডকে ভারতের প্রশাসনিক এক্তিয়ারের আওতায় ঢোকানোর বিরোধিতা করেছে। এই অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট, কখনও তা বদলায়নি। ভারত সম্প্রতি একতরফা ঘরোয়া আইনে যে সংশোধন এনেছে, তা চিনের এলাকাগত সার্বভৌমত্বকে খাটো করে চলেছে। যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, যার কোনও প্রভাবও পড়বে না।
পাল্টা চিনের আপত্তি খারিজ করে ভারত বলেছে, এটা তার ঘরোয়া বিষয়। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রভিশ কুমারের মত, ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না, তারাও সেটাই করবে বলে আশা করে। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট সরকার সংসদে যে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল, ২০১৯ পেশ করেছে, সেটা ভারতের ভূখন্ড সংক্রান্ত ঘরোয়া ইস্যু।
প্রসঙ্গত, ওই বিলেই নতুন কেন্দ্রশাসিত লাদাখ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারত-চীন সীমানা ইস্যুতেও তিনি বলেন, দুটি দেশ রাজনৈতিক মাপকাঠি ও ইস্যুটি মীমাংসায় গঠিত নীতির ভিত্তিতে ন্যয়সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত, পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানে একমত হয়েছে। সেই মীমাংসা হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষ সংশ্লিষ্ট চুক্তিসমূহের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় একমত হয়েছে।
চুনিং নিয়ন্ত্রণ রেখায় গুলিবিনিময় ও ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব সংক্রান্ত প্রশ্নের লিখিত জবাবে কাশ্মীরের চলতি পরিস্থিতিতে চিন ‘গভীর ভাবে চিন্তিত’ বলে জানান। বলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে সংযম দেখিয়ে সাবধানতার সঙ্গে এগতে হবে। দুপক্ষকেই আমরা শান্তিপূর্ণ পথে আলোচনা, মতামত বিনিময়ের পথে সংশ্লিষ্ট বিতর্ক, বিরোধ মিটিয়ে নিতে, আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে আবেদন করছি।
এই নিয়ে সাম্প্রতিক কয়েকটি সপ্তাহে কাশ্মীর নিয়ে দ্বিতীয়বার বিবৃতি দিল চিন। ২৬ জুলাই চিন বলেছিল, ভারত ও পাকিস্তানের আলাপ-আলোচনার রাস্তায় কাশ্মীর ও অন্যান্য বিতর্ক মেটানো উচিত। দুটি দেশের সম্পর্ক উন্নত করতে আমেরিকা সহ আন্তর্জাতিক মহলের ইতিবাচক ভূমিকা পালনের ব্যাপারে সমর্থনও জানিয়েছে চিন।
চিনের বরাবরের অবস্থান হল, কাশ্মীর ইস্যুটি ইতিহাসে অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে, যার সমাধানে ভারত, পাকিস্তানের আলোচনা, রফার মাধ্যমে ব্রতী হওয়া উচিত।