নয়াদিল্লি: দুধের গুণাগুণ সকলেই জানেন।

দুধ না খেলে.....ভাল হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে হবে। এই তত্ত্ব দিয়ে ছোটবেলায় সকলেই নিজেদের মায়েদের হাতে দুধের গেলাস নিয়ে ছুটতে দেখেছেন।

ছোটবেলার সেই অভ্যাস বড় বেলাতেও পিছু ছাড়েনি। তাই আজও, সবকিছু সত্ত্বেও খাদ্যালিকায় এক গেলাস দুধ যেন না হলেই নয়। ফলে, মানবজীবনে দুধের গুরুত্ব অপিরিসীম।

তবে, আমরা যে দুধ খাই, সাধারণত তা গরুর মা মোষের দুধ। কিন্তু, যদি বলা হয় আলশোলার দুধ? শুনে অনেকেই বলবেন, এটা কি সুকুমার রায়ের রচনা না কি! অবাক মনে হলেও এটা সত্যি! আরশোলার দুধ হয়। আর সেই দুধের গুণ গরু বা মোষের দুধের চেয়ে ঢের বেশি।

সম্প্রতি একদল গবেষক এমন একটি আবিষ্কার করেছেন, যা গোটা খাদ্য তালিকার চিত্রটাই পাল্টে দেবে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ক্রিস্টালোগ্রাফি (আইইউসিআর)-এর একটি পত্রিকায় একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পেয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, আরশোলার নাড়িভুঁড়িতে এমন একটি প্রোটিন ক্রিস্টাল (স্ফটিক) রয়েছে, যার খাদ্যগুণ চার গেলাস গরু বা মোষের দুধের সমান! যা, বিজ্ঞানীদের মতে, ভবিষ্যতে বিশ্বের খাদ্য-সমস্যার সমাধানে এক বৃহৎ পদক্ষেপ হতে পারে।

তবে, এই আরশোলা আর যে সে আরশোলা নয়। একটি বিশেষ প্রজাতির আরশোলা। সাধারণত, আরশোলা হল পশুবিশ্বে কীটপতঙ্গ বা পোকা-শ্রেণীভূক্ত। ডিমের মাধ্যমে তারা বংশবৃদ্ধি করে।

কিন্তু, প্যাসিফিক বিটল ককরোচ (বৈজ্ঞানিক নাম ডিপ্লোপটেরা পাঙ্কটাটে) হল এমন এক প্রজাতির আরশোলা যারা একমাত্র স্তন্যপায়ীদের মত সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয় (প্রাণীবদ্যার পরিভাষায় একে বলা হয় ভিভিপ্যারাস)! শুধু তাই নয়, নিজের বাচ্চার জন্য এই আরশোলার শরীরে দুধ উৎপন্ন হয়। সেই দুধের এক-একটি প্রোটিন ক্রিস্টাল তিন গেলাস মোষের দুধের সমান বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে প্রোটিনের জন্য ওই প্রজাতির আরশোলার চাষ করতে হবে না বলে জানা গিয়েছে ওই গবেষণাপত্রে। যে জিন আরশোলার শরীরে ওই দুধ উৎপন্ন করে, তাকে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণা দলের প্রধান সুব্রহ্মণ্যম রামস্বামী জানান, ওই ক্রিস্টাল বা স্ফটিকে রয়েছে প্রোটিন, ফ্যাট, সুগার এবং সবরকম প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। এক কথায় সম্পূর্ণ আহার।

এবার বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন ইস্ট (ছত্রাক বিশেষ, যা পাঁউরুটি তৈরি করতে অতি প্রয়োজনীয়) ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণে এই ক্রিস্টাল কৃত্রিমভাবে তৈরি করার। তাঁর মতে, ওই প্রজাতির আরশোলার চাষ করে তার নাড়িভুঁড়ি কেটে ওই বিশেষ ক্রিস্টালের নির্যাস বের করার চাইতে কৃত্রিমভাবে তৈরি করাটাই অধিকাংশ মানুষ পছন্দ করবেন।

তবে, স্বীকার করতে তো দোষ নেই, যে দিনের শেষে তা আরশোলার দুধ!