বেজিং: চিনে আবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। চিনের সর্বেসর্বা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কোভিড-১৯ কে জয় করা সম্ভব হয়েছে বলে ঘোষণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে একাধিক শহরে। চিনে সম্প্রতি হেবেই থেকে সংক্রমণের প্রথম খবর আসে। সেখান থেকে তা দেশের উত্তরপূর্বের আরও ১১ এলাকায় ছড়ায়। অবশেষে সংক্রমণের ঢেউ লেগেছে বেজিংয়েও। রাজধানী শহরে নতুন করে লকডাউন জারি করতে হয়েছে। নতুন করে সংক্রমণের এই ধাক্কাকে অনেকেই ২০২০-র মার্চ থেকে চিনে সবচেয়ে বড় অতিমারী বলেও দাবি করছে। বেজিংয়ের ড্যাক্সিং জেলাকে হটস্পট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যদিও মাত্র ২ জনের পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ হওয়ার কথা জানিয়েছে, সংখ্যাটা হয়তো বিশ্বাসযোগ্য় নয় কেননা চিনের গণ পরীক্ষায় অতীতে অনেক সমস্যা ধরা পড়েছে। বেজিংয়ে নতুন করে সংক্রমণের হদিশ মেলায় ও স্থানীয় স্তরে তা ছড়াতে থাকায় পরিষ্কার চিন মারণ ভাইরাসকে নিঃসন্দেহে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। পাশাপাশি উপসর্গ না থাকা সংক্রমিত লোকজনও আরেকটা বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।
তবে চিনের সংবাদমাধ্যম নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর নিয়ে আলোচনা করছে না বলে খবর। দি গ্লোবাল টাইমসে এর প্রায় উল্লেখ নেই বললেই চলে। নতুন সংক্রমণের প্রেক্ষাপটের অনেক তথ্যও আছে যদিও। কেউ আবার নতুন সংক্রমণের পিছনে ব্রিটেনে হদিশ মেলা নতুন স্ট্রেনকে দায়ী করছে। তাদের বক্তব্য, নতুন সংক্রমণের কেসগুলি স্থানীয় ভাবে ছড়ায়নি, বাইরে থেকে এসেছে। গত বুধবার পর্যন্ত বেজিংয়ে সাতটি কেসের কথা সরকারি ভাবে সামনে এসেছে। কিন্তু তার পরপরই সংখ্যাটা বেড়ে ১৭ হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। এসব থেকে চিন তড়িঘড়িই করোনার বিরুদ্ধে সাফল্য ঘোষণা করেছে বলে মনে হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর থেকে বেজিঙে ঢোকা সকলের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে চিন, গণ পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশানুসারে, ৫০ লক্ষের কম জনসংখ্যা, এমন শহরগুলিকে দুদিনের মধ্যে গণ পরীক্ষা সেরে ফেলতে হবে। তার বেশি লোকজনের বাস, এমন শহরগুলিকে তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে পরীক্ষা সম্পূর্ণ করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কঠোর লকডাউন বিধি কার্যকর করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে লকডাউন আংশিক হলেও ড্যাক্সিংয়ের অনেক বাসিন্দাই বেজিং ছাড়তে পারেননি। ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, প্রশাসনের লোকজন লকডাউনের সময় বাইরে বেরনোয় একটি লোককে গাছের সঙ্গে বেঁধে বকাঝকা করছে।
হেবেইয়ের নতুন সংক্রমণকে মিনি-উহান তকমা দিয়েছেন চিনের শীর্ষ অতিমারী বিশেষজ্ঞ জর্জ ফু গাও। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন, উহানের মতো অত বড় না হলেও স্তানীয় ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তিনি সাবধানী তবে আশাবাদী বলছেন নিজেকে, যদিও বিষয়টা একেবারেই হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না।
এ বছরে এই প্রেক্ষাপটে নববর্ষ উদযাপন হয়তো বাতিল হবে চিনে। লোকজনের জমায়েত, আসা যাওয়ার ওপর নতুন করে বিধিনিষিধ চালু হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদেরও বাইরে কোথাও যেতে হলে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হচ্ছে। শ্রমিকদের নিজেদের পকেট থেকে পয়সা দিয়ে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।