ঢাকা: জঙ্গিরা রেহাই দিয়েছিল। তাঁকে রেস্তোরাঁ ছেড়ে চলে যেতে বলেছিল। কিন্তু তাঁর দুই বন্ধুকে ছাড়েনি। তাই গুলশনের ওই রেস্তোরাঁ ছেড়ে যাননি ফরাজ আয়াজ হোসেন। ফলে দুই বন্ধু তারিষি জৈন ও আবিন্তা কবীরের সঙ্গেই জঙ্গিদের নৃশংসতার বলি হতে হল ফরাজকে।




তারিষি, আবিন্তা ও ফরাজের বন্ধুত্ব ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। পরে তাঁরা তিন জনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এই তিন বন্ধুর মধ্যে একমাত্র ফরাজই বাঙালি এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান হওয়ায় জঙ্গিদের শর্ত পূরণ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তারিষি ও আবিন্তা পশ্চিমী পোশাক পরেছিলেন। তাঁরা যথাক্রমে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। বাংলা ভাষায় ভাল করে কথা বলতে পারতেন না। কোরানের আয়াতও বলতে পারেননি। সেই কারণে তাঁদের ছাড়েনি জঙ্গিরা। বন্ধুদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন ফরাজ। কিন্তু তাঁকেও হত্যা করা হয়।

 

ফরাজের আত্মীয় হিসাম হোসেন এবং ছোটবেলার বন্ধু আরবাজ আলম বলেছেন, তাঁরা ওই রেস্তোরাঁ থেকে মুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই ঘটনার কথা জানতে পেরেছেন। কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরবাজ বলেছেন, ফরাজ শুধু বাংলাদেশীই ছিল না, সে বিপদের সময় ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে উঠে আসা বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারত না। এটা বোঝার ক্ষমতা জঙ্গিদের ছিল না। বিশ্বায়নের যুগে তিনটি অল্পবয়স্ক ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব, আধুনিক পোশাক পরে চলাফেরা জঙ্গিদের মানসিকতার বিপরীত।

 

ফরাজের ঠাকুর্দা লতিফুর রহমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তিনি প্রথমসারির একটি বাংলা ও একটি ইংরাজি সংবাদপত্রের মালিক। ফরাজের মা সিমিন হোসেন একটি নামী ঔষধ প্রস্তুতকারী সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ছুটি কাটানোর জন্য ১৮ মে দেশে ফেরেন ফরাজ। তাঁর দুই বন্ধুও ছুটিতে বাংলাদেশে আসেন।

 

আবিন্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও, তাঁর জন্ম বাংলাদেশেই। তিনি এদেশেই পড়াশোনা করেছিলেন। তারিষির বাবা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন। ফলে তিন বন্ধুর সঙ্গেই বাংলাদেশের গভীর যোগ ছিল। এদেশেই তাঁদের এভাবে প্রাণ হারাতে হল।

 

আবিন্তার আত্মীয় আফসরা আদিবা বলেছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় তিন বন্ধু গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারিতে দেখা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। পরিবারের সঙ্গে রমজানের উপবাস ভঙ্গ করে সেখানে যান আবিন্তা। ভাল করে বাংলা বলতে না পারা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এবং কোরানের আয়াত বলতে না পারাই কি আবিন্তার দোষ? যার জন্য তাঁকে খুন হতে হল? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন আবেগতাড়িত আদিবা।