ইস্তানবুল: তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ৩ মাসের জন্য জারি হল জরুরি অবস্থা। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে এ কথা জানিয়েছেন খোদ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এর্দোগান। তাঁর অবশ্য দাবি, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গণতন্ত্র, আইন ও স্বাধীনতা খর্ব করা হবে না- বরং এই ৩টি স্তম্ভকে রক্ষা করা ও শক্তিশালী করার জন্যই জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত। আঙ্কারায় ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ও মন্ত্রিসভার দীর্ঘ বৈঠক সেরে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।


জরুরি অবস্থার ফলে মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ না হওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন এর্দোগান। এর মধ্যেই আবার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তুরস্কে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, দাবি করেছেন, আর্থিক সংস্কার চলবে।

যদিও কামাল আতার্তুকের আদর্শ থেকে সরে এসে দেশকে ইসলামী কট্টরপন্থার দিকে দ্রুত নিয়ে চলার অভিযোগ রয়েছে এর্দোগানের বিরুদ্ধে। তাঁর এই জরুরি অবস্থা জারিও মনে করা হচ্ছে, সেদিকেই আরও একটি পদক্ষেপ। রেটিংস সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর ইতিমধ্যেই তুরস্কের রেটিং এক ধাপ কমিয়ে দিয়েছে, দেশটির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও ‘নেগেটিভ’ দেখিয়েছে তারা। স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর জানিয়েছে, তুরস্কের রাজনৈতিক দিগন্তে যেভাবে ‘পোলারাইজেশন’ দেখা যাচ্ছে, তা খুব একটা আশাপ্রদ নয়। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকেই তুরস্কের মুদ্রা লিরার দাম ক্রমাগত কমছে। অভ্যুত্থানে প্রাণ হারিয়েছেন ৩০০-র কাছাকাছি মানুষ, অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার সন্দেহে ৫০,০০০-এর বেশি সরকারি আমলা ছাঁটাই অথবা সাসপেন্ড হয়েছেন। জেলবন্দি হয়েছেন অনেকে। এঁদের মধ্যে শুধু বিচারক ও আইনজীবীই হলেন ৩,০০০-এর কাছাকাছি। এছাড়া ৬,৭৪৬জন সেনাকর্মীকে বন্দি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১০০-র বেশি জেনারেল। এর্দোগান বলেছেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ‘ক্যানসারের ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়েছে, তা নির্মূল করতে হবে।

‘গণতন্ত্রে’-র বজ্রমুষ্টি থেকে ছাড় পায়নি শিক্ষাবিভাগও। শিক্ষাবিভাগের সন্দেহভাজন ১৫,২০০জন কর্মীর মধ্যে ৬,৫৩৮জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ৬২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এগুলির মধ্যে রয়েছে ৫২৪টি বেসরকারি স্কুল। ২১,০০০ শিক্ষক শিক্ষিকার পড়ানোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ১,৫৭৭জন ডিন।

এর্দোগান এই সব পদক্ষেপই গণতন্ত্রের স্বার্থে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেও কুর্দ জনতাপন্থী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি আশঙ্কাপ্রকাশ করেছে, যে কোনও সময় খুন হয়ে যেতে পারেন বিরোধীরা। রাস্তায় নেমে সেনাকর্মীদের প্রকাশ্যে খুন করে যারা অভ্যুত্থান রুখে দিয়েছিল, তারা যতটা না গণতন্ত্রপন্থী, তার থেকে অনেক বেশি এর্দোগানপন্থী বলে কুর্দরা দাবি করেছে।

সরকারপন্থীরা অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে। তুরস্কে অবশ্য মৃত্যুদণ্ড এখন আর প্রচলিত নেই। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এর্দোগান জানিয়েছেন, আবার মৃত্যুদণ্ড চালুর কথা ভাবছেন তাঁরা।