ওয়াশিংটন: মাসুদ আজহারকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করা হবে কিনা, তা নিয়ে রাষ্টপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখে চিনকে আমেরিকা পরিষ্কার জানিয়ে দিল, পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জইশ-ই-মহম্মদ প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপুঞ্জের ওই তকমা পাওয়ার মাপকাঠিতে পড়ে। চিন তাকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণার বিরোধিতা করে আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা অর্জনে পারস্পরিক স্বার্থের ক্ষতি করছে।
মাসুদ প্রতিষ্ঠিত জইশ ভারতে সংসদ চত্বর, পঠানকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটি, জম্মু ও উরির সেনা ক্যাম্পে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েছে। গত মাসে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় মানববোমা হামলায় অন্তত ৪০ সিআরপিএফ জওয়ান হত্যার দায়ও নিয়েছে তারা। এই প্রেক্ষিতেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্য দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ২৭ ফেব্রুয়ারি মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণার দাবিতে নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ আল কায়েদার নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কমিটিতে প্রস্তাব পেশ করেছে। তাদের আশা, চিন এবার বিচক্ষণতা দেখিয়ে এই প্রস্তাব সমর্থন করবে। তবে বেজিংয়ের খবর, চিন ফের মাসুদকে কালো তালিকায় ফেলার চেষ্টায় বাধা দেওয়ার ইঙ্গিতই দিয়েছে। চিনের বরাবরের বক্তব্য, এমন সমাধান চাই, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র লু কাং মিডিয়াকে বলেছেন, আমি এটাই বলতে পারি, চিন দায়িত্বশীল মানসিকতা দেখিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের ১২৬৭ কমিটির আলোচনায় সামিল হবে। মাসুদকে তালিকায় ফেলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি বলতে চাই, চিন সবসময় দায়িত্বশীল মনোভাব দেখায়, নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে, ইস্যুটি সঠিক ভাবে বিবেচনা করে। সেই আলোচনা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিয়মনীতি, পদ্ধতি মেনে হতে হবে এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধানই এই ইস্যুর মীমাংসার পক্ষে অনুকূল।
অতীতে চিন মাসুদকে রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকাভুক্ত বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী ঘোষণায় ভারতের প্রয়াসে বারবার বাগড়া দিয়েছে বলে এবার তারা কী করবে, সেদিকে নজর সবার। নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি ভেটো দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সদস্য দেশের অন্যতম চিনের সওয়াল, ওর বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই।
মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র রবার্ট পাল্লাদিনো সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, মাসুদ জইশের প্রতিষ্ঠাতা, নেতা। রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় পড়ার মাপকাঠির মধ্যে সে পড়ছে। জইশ একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য দায়ী, আঞ্চলিক শান্তি, সুস্থিতির সামনে বিপদ। তিনি জানান, রাষ্ট্রপুঞ্জ সহ নানা ক্ষেত্রে ভারত ও আমেরিকা সন্ত্রাস দমনে একযোগে কাজ করছে। জইশ ও তার প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে তাদের অবস্থানও সবার ভাল জানা। যদিও তিনি একইসঙ্গে বলেছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা কমিটি, তাদের কার্যকলাপ গোপন থাকে, তাই নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আমরা মন্তব্য করব না। তবে নিষেধাজ্ঞা কমিটির সঙ্গে মিলে কাজ করে যাব যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে, ওদের নিষেধাজ্ঞা তালিকাটি সঠিক, সময়োপযোগী হবে। আমেরিকা, চিনের পারস্পরিক স্বার্থ রয়েছে আঞ্চলিক শান্তি, সুস্থিতি রক্ষায়। মাসুদকে নিষিদ্ধ তালিকায় ফেলতে পারা না গেলে সেই লক্ষ্য ধাক্কা খাবে।