নয়াদিল্লি: মারা গেলেন কিউবার প্রাক্তন কমিউনিস্ট সর্বাধিনায়ক ফিদেল কাস্ত্রো। কিউবার সরকার নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন এই খবর দিয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল নব্বই।


পুরো নাম ফিদেল আলেজান্দ্রো কাস্ত্রো রুজ। সংক্ষেপে ফিদেল কাস্ত্রো। গত শতাব্দীর প্রায় অর্ধেক সময়টা কিউবা শাসন করেন তিনি। ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তারপর প্রেসিডেন্ট পদে থাকেন ৭৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত। তাঁর শাসনে কিউবায় একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন চালু হয়। ২০০৬-এ অন্ত্রে রক্তক্ষরণের কারণে সাময়িকভাবে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তাঁর ছোট ভাই রাউলের কাছে। দু’বছর পর রাউল পাকাপাকিভাবে কিউবার প্রেসিডেন্ট পদে বসেন। অসুস্থ ফিদেল তখন থেকেই কার্যত অন্তরালে চলে যান। জানুয়ারি মাসে শেষবার তিনি প্রকাশ্যে আসেন, হাভানার একটি আর্ট স্টুডিও উদ্বোধন উপলক্ষ্যে। সে মাসের শেষে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন। তিনি জানান, শারীরিক ও মানসিকভাবে সজাগ রয়েছেন কিউবার এই প্রাক্তন সর্বাধিনায়ক।

যৌবনে আপাদমস্তক বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো চে গুয়েভারার বন্ধু ও সহযোগী ছিলেন। হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বামপন্থায় দীক্ষিত হন তিনি। ডমিনিক প্রজাতন্ত্র ও কলম্বিয়ায় দক্ষিণপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগদানের পর কাস্ত্রো কিউবার বাতিস্তা সরকারকে উৎখাতের ছক কষেন। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের জেরে ১ বছর জেলে কাটিয়ে তিনি পাড়ি দেন মেক্সিকো, ভাই রাউল কাস্ত্রো ও চে গুয়েভারার সঙ্গে গড়ে তোলেন বিপ্লবী দল, দ্য টুয়েন্টি সিক্সথ জুলাই মুভমেন্ট। কিউবায় ফিরে এসে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে উৎখাত করেন বাতিস্তার একনায়কতন্ত্র।

চে গুয়েভারা ও ফিদেল কাস্ত্রো

তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কে উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েকবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। কিউবার ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে, দেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উসকে দিয়ে কাস্ত্রোকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কিউবাবাসীর মধ্যে কাস্ত্রোর জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। বিশেষ করে তাঁর মার্কিন বুর্জোয়াতন্ত্র বিরোধী বিপ্লবী সত্ত্বা কিউবার গরিব মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। ১৯৬২-তে, ঠান্ডা লড়াই চলাকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে কিউবায় পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনেরও অনুমতি দেন তিনি।



কিউবায় তিনি চালু করেন কেন্দ্রভিত্তিক আর্থিক নীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা বলেন, একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপ পোক্ত হয়, দেশের মধ্যে বিরোধী সুর শোনা গেলে করা হয় কণ্ঠরোধের ব্যবস্থা। ৯১-এ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরেও তাঁর বিশ্বায়ন বিরোধী নীতি সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ছিল।

তাঁর সমর্থকরা তাঁকে সমাজতন্ত্রের হোতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, মানবতাবাদী বলে অভিহিত করতেন। একইসঙ্গে বিরোধীদের কাছে তিনি ছিলেন সর্বগ্রাসী একনায়ক, যাঁর শাসনকালে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে চলেছে অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘন, যাঁর আমলে ১০লক্ষেরও বেশি কিউবার নাগরিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, অন্ধকারে তলিয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি। যদিও নিজের কার্যকলাপ ও লেখালেখি দিয়ে বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ ও গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করেছেন কাস্ত্রো। তাঁর মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি যুগের অবসান হল।