লন্ডন: লন্ডনের নর্থ কেনসিংটনের গ্রেনফেল টাওয়ারের গতকালের বিধ্বংসী আগুনের কারণ সম্ভবত ফ্রিজে বিস্ফোরণ। তার জেরেই ২৪ তলা ওই বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ওই বহুতলের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পঞ্চমতলার এক বাসিন্দা গভীর রাতে প্রতিবেশীর দরজায় ধাক্কা মেরেছিলেন বলে তিনি শুনেছেন। ওই বাসিন্দা জানান, তাঁর ফ্রিজ ফেটে ফ্ল্যাটে আগুন ধরে গিয়েছে।

এরপরেই আগুন ছড়িয়ে যায় গোটা বাড়িতে। গতকাল স্থানীয় সময় রাত সোয়া এগারোটা নাগাদ আগুন লাগার ব্যাপারে জানতে পারেন বহুতলের বাসিন্দারা। ততক্ষণে বহুতলের দক্ষিণদিকের একটা ছোট অংশে আগুন ধরে গিয়েছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে গোটা বহুতল।

অল্পদিন আগে ১০.৩ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে গোটা বাড়ির সংস্কার হয়। কিন্তু বাড়ির বাইরেটা সাজাতে বেশ কিছু দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তার ফলেই এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, ফায়ার অ্যালার্ম শুনতে পাননি তাঁরা। অর্থাৎ আগুন যে লেগেছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার কোনও ধারণাই ছিল না অনেকের কাছে। তা ছাড়া ১২০টি ফ্ল্যাটের বহুতলের কোথাও আগুন নেভানোর জন্য জল ছেটানোর ব্যবস্থাও ছিল না, বহুতলে সিঁড়ি ছিল মোটে একটা। এর ফলেও বিপদ এড়াতে পারেননি অনেকে।



বহুতলের এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, ১২ তলার ওপর যাঁরা থাকতেন, তাঁদের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আকাশপথে উদ্ধারকাজ না চলায় সম্ভবত তাঁদের বার করে আনা যায়নি। এমনিতে যখন কোনও বহুতলে আগুন লাগে, বাসিন্দারা সকলে নীচে নেমে আসেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এত বড় বহুতলের খুব বেশি বাসিন্দা নীচে আসতে পারেননি। অনেকের যে চিকিৎসা চলছে, এমনটাও নয়। অন্তত ৫০০-৬০০ মানুষকে ওই আগুন গ্রাস করেছে বলে তাঁর আশঙ্কা।

বস্তুত ওই বহুতলে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। এমার্জেন্সি সার্ভিসের জন্য তাতে ঢোকা, বার হওয়ার উপায় ছিল একেবারেই অপ্রতুল। বাসিন্দাদের বলা হয়েছিল, আগুন লাগলে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে, যা কিনা ভাবাই যায় না।

ওই বহুতলের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে বাসিন্দাদের উদ্বেগ ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লেখেন তাঁরা। তাতে লেখেন, ভয়ঙ্কর কিছু ঘটলে তখনই বোঝা যাবে, তাঁদের উদ্বেগ কতটা সঠিক ছিল।

তাঁদের ভয় যে সঠিক ছিল, তার প্রমাণ দিলেন তাঁরা। নিজেদের জীবন দিয়ে।