প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দর ব্লাডিভোস্টকের এক সাফারি পার্কের ডিরেক্টর দিমিত্রি মেজেন্টসেভ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিমুরের মৃত্যুর কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গত ৫ নভেম্বর তিমুরের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়।
পাঁচ বছরের তিমুরকে বাঁচানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সফল হয়নি। আমুর ও তিমুরের বন্ধুত্বের কথা সারা রাশিয়াতেই ছড়িয়ে পড়েছিল। তিমুরের মৃত্যুতে সাফারি পার্কের কর্মীরা শোকগ্রস্ত। ডিরেক্টর বলেছেন, পূর্ণ মর্যাদার সঙ্গে তিমুরের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
স্বাভাবিক কারণেই ছাগলটির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার শরীর খারাপ হয়ে পড়ে দীর্ঘদিনের বন্ধু আমুরের সঙ্গে বচসার পর। মেজেন্টসেভ একথা জানিয়েছেন।
আমুর ওই সাফারি পার্কের সাইবেরিয়ান বাঘ। ২০১৫-তে ওই বাঘের সঙ্গে ছাগলটির অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
আসলে তিমুরকে আমুরের শিকার হিসেবেই সাফারি পার্কে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আস্তানায় ঢোকার পরও বাঘটি ছাগলটিকে মারা তো দূরের কথা স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। আসলে বাঘকে দেখে একেবারেই ঘাবড়ে যায়নি, ভয়ও পায়নি। সম্ভবত, এমন ফুরফুরে মেজাজের ছাগলটিকে শিকারের পরিবর্তে সঙ্গী হিসেবেই বেছে নিয়েছিল আমুর। সময়টা ২০১৫-র শেষের দিকে। তারপর তাদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য হয়ে পড়ে। মনে হচ্ছিল, তারা যেন একে অপরকে দীর্ঘদিন ধরেই জানত।
মেজেন্টসেভ বাঘ ও চিতাবাঘদের নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি এই বন্ধুত্বকে অভাবনীয় বলে মন্তব্য করেছেন।
তিমুর আমুরের আস্তানাতেই থাকত। একসঙ্গে খেত এবং খেলাও করত। বাঘটি ছাগলটিকে শিকার করার কায়দা শেখানোরও চেষ্টা করেছিল। একে অপরের মাথায় ঠোকাঠুকি করে, তাড়া করে মজা করত। কিন্তু আচমকাই বন্ধুত্ব বিগড়ে যায়। আসলে তিমুর খুব বেশি সাহসী হয়ে পড়ছিল। এমনকি বাঘকে টেক্কা দিতেও কসুর করত না সে।
মেজেন্টসেভ বলেছেন, প্রায় মাসখানের ধরে আমুরকে জ্বালাতন করতে শুরু করে তিমুর। শেষপর্যন্ত একদিন বাঘের ঘাড়ে চড়ে পড়ে ছাগলটি। বন্ধুর এই বেয়াদপি আর বরদাস্ত করতে পারেনি আমুর। ২০১৬-র জানুয়ারিতে তিমুরের ঘাড় ধরে একটি টিলা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
মেজেন্টসেভ এই ঘটনায় আঘাত পায় তিমুর। খোঁড়াতে শুরু করে এবং জীবনের উত্সাহই যেন হারিয়ে ফেলে। তবে তার একগুঁয়ে স্বভাবে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ চিকিত্সার জন্য তিমুরকে মস্কোতে পাঠায়। কিন্তু বাঘের আঘাতের ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি ছাগলটি।
আমুর এখনও সাফারি পার্কে নিজের আস্তানাতেই রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ তিমুরের সমাধিতে একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে।
রাশিয়ার বহু মানুষই তিমুরের মারা যাওয়ার খবরে অনলাইনে দুঃখপ্রকাশ করেছেন।